পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৪৯
উর্দ্ধার পর্ব্ব—দ্বিতীয় প্রবাহ

যন্ত্রণা অনুভব করিবে না? যে ধর্ম্মই কেন হউক না, পবিত্রতা রক্ষা করিতে তৎকার্যে যোগ দিতে কে নিবারণ করিবে? মহাপুরুষ মোহাম্মদ পবিত্র, হাসান পবিত্র, হোসেনের মস্তক পবিত্র; সেই পবিত্র মস্তকের এত অবমাননা? হোসেন যুদ্ধে হত হইয়াছেন বলয়াই কি এত তাচ্ছিল্য? জগৎ কয় দিনের? এজিদ! তুই কি জগতে অমর হইয়াছিস? জীবনশূন্য দেহের সদ্গ‌তির সংবাদ শুনিয়া কি তোর চিরজ্বলন্ত রোষাগ্নি নির্ব্বাণ হইত না? তোর আকাঙ্ক্ষা কি যুদ্ধ-জয়ের সংবাদ শুনিয়াও মিটিত না? হোসেন-পরিবারের মহাননের রোল সপ্ত তল আকাশ ভেদ করিয়া অনন্তধামে অনন্তরূপে প্রবেশ করিয়া অনন্ত শোক বিকাশ করিতেছে, ঈশ্বরের আসন টলিতেছে। —তোর মন কি এতই কঠিন যে, জীবনশূন্য শরীরে শত্রুতা সাধন করিতে এটি করিতেছিস না! তোকে কোন্ ঈশ্বর গড়িয়াছিল জানি না; কি উপকরণে তোর শরীর গঠিত, তাহাও বলিতে পারি না। তুই সামান্য লোভের বশবর্তী হইয়া কি কাণ্ড করিলি! তোর এই অমানুষিক কীর্তিতে জগৎ কাঁদিবে, পাষাণ গলিবে। এই মহাপুরুষ জীবিত থাকিলে তাহার এই মুখে কত শত প্রকারের ঈশ্বরের গুণ-কীর্ত্তন—কত কাল ঈশ্বরের মহত্ত্ব প্রকাশ হইত, তাহার কি ইয়ত্তা আছে? তুই অসময়ে মহাঋষি হোসেনের প্রাণহরণ করিয়াছি, কিন্তু তোর পিতা এমাম বংশের ভিন্ন নহেন তাঁহার হৃদয় এমন কঠিন প্রস্তরে গঠিত ছিল না। তাহার ঔরসে জন্মিয়া তোর এ কি ভাব! রক্তমাংস-বীর্য গুণ আজ তোর নিকট পরাস্ত হইল। মানবশরীরের স্বাভাবিক গুণ আজ বিপরীত ভাব ধারণ করিল। তাহা যাহাই হউক, আজরের এই প্রতিজ্ঞা—জীবন থাকিতে সে হোসেন-শির দামেস্কে লইয়া যাইতে দিবে না; যত্নের সহিত, আদরের সহিত, ভক্তিসহকারে সে ইহা মহাপ্রান্তর কারবালায় লইয়া যাইয়া হোসেনের শিরশূন্য দেহের সন্ধান করিয়া তাঁহার সম্মতির উপায় করিবে। প্রাণ থাকিতে এ শির অজির ছাড়িবে না!”

 আজরের স্ত্রী বললেন, “এই হোসেন বিবি ফাতেমার অঞ্চলের নিধি, নয়নের পুত্তলী ছিলেন। হায়! হায়! তাঁহার এই দশা। এ জীবন থাক্‌