পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
২৫৮

করিয়া মারিয়া ফেলিলাম। তুই স্ত্রীলোক হইয়া আমার অনুগ্রহ চাহিস না?”

 এই বলিয়া সীমার বর্শাহস্তে আজরের স্ত্রীর দিকে যাইল, আজারের স্ত্রী খড়গহস্ত রোষভরে দাঁড়াইয়া বলিলেন, “দেখিতেছিস্‌। ওরে পাপিষ্ঠ নরাধম, দেখিতেছিস্‌? তিনটি পুত্রের রক্তে আজ এই খড়গ রঞ্জিত করিয়াছি, পরপর আঘাতে স্পষ্টতঃ তিনটি রেখা দেখা যাইতেছে। পামর! নিকটে আয়, চতুর্থ রেখা তোর দ্বারা পূর্ণ করি।”

 সীমার একটু সরিয়া দাড়াইল। আজরের স্ত্রী বলিল, “ভয় নাই, তোকে মারিয়া আমি কি করিব? আমার বাঁচিয়া থাকা আর না থাকা, সমান কথা। তবে দেখিতেছি, এই খড়্‌গে তিন পুত্র গিয়াছে, আর ঐ বর্শাতে তুই আমার জীবন-সর্বস্ব পতির প্রাণ বিনাশ করিয়াছিস্?” এই কথা বলিতে বলিতে আজরের স্ত্রী সীমারের মস্তক লক্ষ্য করিয়া খড়গাঘাত করিলেন। খড়গ সীমারের হস্তস্থিত বর্শায় বাধা পাইয়া তাহার দক্ষিণ হস্তে আঘাত করিল। বর্শাবিদ্ধ হোসেন-মস্তক বর্শাচ্যুত হইয়া মৃত্তিকায় পতিত হইবামাত্র আজরের স্ত্রী মস্তকটি ক্রোড়ে করিয়া বেগে পলাইতে লাগিলেন; কিন্তু সীমার বাম হস্তে সাধ্বী সতীর বস্ত্রাঞ্চল ধরিয়া সজোরে ক্রোড় হইতে হোসেন-শির কাড়িয়া লইল। আজরের স্ত্রী তখন একেবারে হতাশ হইয়া নিকটস্থ খড়গ দ্বারা আত্ম-বিসর্জন করিলেন,সীমারের বর্শাঘাতে তাহাকে মরিতে হইল না। সীমার হোসেন-শির পূর্ববৎ বর্শায় বিদ্ধ করিয়া দামেস্কাভিমুখে চলিল।