পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৬৫
উদ্ধার পর্ব্ব—চতুর্থ প্রবাহ

সর্ব্বধর্ম্মাবলম্বীর নিকট সমভাবে আদৃত,—সেই নর-কিন্নর-দানবদল-ভূপতি মহামতিও আজ কারবালা প্রান্তরে উপস্থিত! যে দায়ূদের গীতে জগৎ মোহিত, পশুপক্ষী উন্নত, স্রোতঃস্বতীর স্রোত স্থিরভাবাপন্ন, সেই দায়ুদও আজ কারবালায়।

 ঈশ্বর-প্রণয়ী ইব্রাহিম,—যাহাকে ঈশ্বরদ্রোহী রাজা নমরুদ প্রচণ্ড অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করিয়া সত্য প্রেমিকের প্রাণসংহার করিতে ইচ্ছা করিয়াছিলেন, ফলে যে অগ্নিশিখা গগনস্পর্শী হইয়া জগজ্জনের চক্ষে ধাঁধা লাগাইয়া দিয়াছিল,—দয়াময়ের কৃপায় সেই প্রজ্জ্বলিত গগনস্পশী অগ্নি, ইব্রাহিম-চক্ষে বিকশিত কমলদলে সজ্জিত উপবনের ন্যায় দেখাইয়াছিল এবং সেই অগ্নিশিখা সুগন্ধযুক্ত স্নিগ্ধকর গোলাপমালা বলিয়া বোধ হইয়াছিল,সেই সত্য বিশ্বাসী মহাঋষিও আজ কারবালা-ক্ষেত্রে সমাগত। ইসমাইল-যিনি নিজ প্রাণ ঈশ্বরের উদ্দেশে উৎসর্গ করিয়া “দোম্বার” পরিবর্ত্তে নিজে বলি হইয়াছিলেন, সেই ঈশ্বরভক্ত ইসমাইলও আজ কারবালা-প্রান্তরে! ঈশা-যিনি প্রকৃত সন্ন্যাসী, জগন্বেষী মহাঋষি তাপস, ঈশ্বরের মহিমা দেখাইতে যে মহাত্মা চিরকুমারী মাতৃগর্ভে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন, তিনিও আজ মর্ত্ত্যধামে কারবালার মহাক্ষেত্রে। ইউনুস-যিনি মৎস্যগর্ভে থাকিয়া ভগবানের অপরিসীম ক্ষমতা দেখাইয়াছিলেন—তিনিও কারবালায়! মহামতি হজরত ইউসুফ যিনি বৈমাত্র ভ্রাতার চক্রে অন্ধকূপে নিক্ষিপ্ত হইয়াও ঈশ্বর-কৃপায় জীবিত ছিলেন এবং দাস-পরিচয়ে বিক্রীত হইয়া শেষে মিসর-রাজসিংহাসন অধিকার করিয়াছিলেন, সেই মহাসুশ্রীর অগ্রগণ। পূর্ণজ্যোতির আকর হজরত ইউসুফও আজ কারবালার মহা-প্রান্তরে। হজরত জাজিস্‌কে বিধর্ম্মিগণ শতবার শত প্রকারে বধ করিয়াছে, কিন্তু তিনিও পুনঃ পুনঃ জীবন প্রাপ্ত হইয়া দয়াময়ের মহিমার জ্বলন্ত প্রমাণ দেখাইয়াছেন। সেই ভুক্তভোগী হজরত জাজিস্‌ও আজ কারবালা-ক্ষেত্রে। এই প্রকার হজরত ইয়াকুব, আস্‌হাব, ইস্‌হাক, ইদ্রীস, আয়ুব, ইলিয়াস্‌, হরকেল, শামাউন, লুত, এহিয়া, জেক্‌রিয়া প্রভৃতি মহা মহা মহাত্মাগণের আত্মা অদৃশ্য শরীরে কারবালায় হোসেনের দৈহিক শেষ-ক্রিয়ার জন্য উপস্থিত হইলেন।

 সকলেই যেন কাহার আগমন-প্রতীক্ষা করিতেছেন। ক্ষণকাল পরে