পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু ২৭২
২৭২

কেন—লোকমান, আফ্‌লাতুন প্রভৃতি মহা মহা চিন্তাশীল মহাজনের মস্তিষ্কও চিন্তায় ঘুরিয়া যায়। কিন্তু এজিদের এমনই দৃঢ় বিশ্বাস যে, মারওয়ান চেষ্টা করিলে অবশ্যই ইহার কোন এক প্রকারের সদুপায় বাহির করিতে পারিবে। মনের ব্যগ্রতায় দামেস্কের বহু লোকের প্রতি তাঁহার চক্ষু পড়িল, কিন্তু মারওয়ান ভিন্ন ইহার স্থির সিদ্ধান্ত করার উপযুক্ত পাত্র মানস-চক্ষে কাহাকেও তিনি দেখিতে পাইলেন না।

 মারওয়ান উপস্থিত হইলে, এজিদ ঐ সকল গুপ্ত বিষয়ের স্থির সিদ্ধান্ত করিতে বলিলেন। মারওয়ান একটু চিন্তা করিয়া বলিল, “আগামী জুম্মাবারে (শুক্রবারে) জয়নাল দ্বারা মহারাজের নামে খোৎবা পাঠ করাই। একণে সমগ্র প্রদেশে হোসেনের নামে খোৎবা হইতেছে। কারণ, হোসেনের পর এ পর্যন্ত মদিনার রাজা কেহ হন নাই। জয়নাল যদি আপন পিতার নাম পরিত্যাগ করিয়া মহারাজের নামে খোৎবা পাঠ করে, তবেই কার্য্যসিদ্ধি — তবেই দামেস্কের জয়-তবেই বিনা যুদ্ধে মদিনা করতলে। যাহার নামে খোৎবা, তিনি মক্কা-মদিনার রাজা! এখনই রাজ্য মধ্যে ঘোষণা করিয়া দিতেছি যে, আগামী জুম্মাবারে শেষ ইমাম জয়নাল আবেদীন দামেস্কসম্রাট-মহারাজাধিরাজ এজিদ নামদারের নামে খোৎবা পাঠ করিবেন। নগরের যাবতীয় ঈশ্বরভক্ত লোককেই উপাসনা-মন্দিরে খোৎবা শুনিতে উপস্থিত হইতে হইবে। যিনি রাজ-আজ্ঞা অবহেলা করিবেন, তৎক্ষণাৎ তাঁহার শিরচ্ছেদ করা যাইবে।”

 এজিদ মহাতুষ্ট হইয়া মারওয়ানকে যথোপযুক্ত পুরস্কৃত করিলেন। মুহূর্তমধ্যে রাজ-ঘোষণা দামেস্ক নগরের ঘরে ঘরে প্রচারিত হইল! ঘোষণার মর্ম্মে অনেকেই সুখী হইল, আবার অনেকে মাথায় হাত দিয়া মাটিতে বসিয়া পড়িলেন। তাহাদের হৃদয়ে বিষম আঘাত লাগিল। প্রকাশ্যে কোন কথা বলিবার সাধ্য নাই—পাছে রাজদ্রোহী সাব্যস্ত হইয়া প্রাণ যায়? গোপনে গোপনে তাহারা বলিতে লাগিলেন, “এত দিন পরে নূরনবী মোহাম্মদের প্রচারিত ধর্ম্মে কলঙ্ক-রেখা পতিত হইল! হায় হায়! কি মর্মভেদী ঘোষাণা! হায় হায়! ইসলাম ধর্মের এত অবমাননা! কাফেরের নামে খোৎবা। বিধর্ম্মী