তাঁহাকে যথার্থ ধার্ম্মিক বলিয়া কিরূপে স্বীকার করিব? হজরত মোহাম্মদ রসুলেল্লার প্রচারিত ধর্ম্মে যিনি দীক্ষিত নহেন, মদিনার সিংহাসনের যিনি অধীশ্বর নহেন, তাহার নামে কি প্রকারে খোৎবা পাঠ হইতে পারে? তাও আবার পাঠ করিবে—জয়নাল আবেদীন! এ কি কথা?”
“আপনি বৃদ্ধ হইয়াছেন, একটু শান্ত হউন। বন্দীভাবে থাকিয়া এতদূর বলা নিতান্তই অন্যায়। যাহা হউক, আমি বলি,—যদি খোৎবাটা পড়িলেই মুক্তিলাভ হয়, তাহাতে দোষ কি? জয়নাল মদিনার সিংহাসনে বসিতে পারিলে কি আর তাহার উপর দামেস্করাজের কোন ক্ষমতা থাকিবে? তখন যাহা ইচ্ছা তাহাই সে করিতে পারিবে, ইহাতে আর আপনাদের ক্ষতি কি?
“ক্ষতি কিছুই নাই;—কিন্তু—”
“আর ‘কিন্তু’ মুখে আনিবেন না, প্রাণ বাঁচাইতে অনেক—
“জয়নালকে একবার ডাকিতে বল।”
জয়নাল আবেদীন আড়ালে থাকিয়া সকলই শুনিতেছিলেন, সালেমা বিবির কথার অভাষেই নিকটে আসিয়া দাঁড়াইলেন। মহারোষের চিহ্ন এবং ক্রোধের লক্ষণ দেখিয়া সালেমা বিবি অনুমানেই অনেক বুঝিলেন; সস্নেহে জয়নালের কপোলদেশ চুম্বন করিয়া অতি নম্রভাবে বলিতে লাগিলেন, “এজিদের নামে খোৎবা পড়ায় দোষ কি? যদি ভগবান কখনও তোমায় সুখ-সূর্য্যের মুখ দেখান, তোমার নামেই লক্ষ লক্ষ, কোটা কোটা লোক খোৎবা পাঠ করিবে। এখন মারওয়ানের কথা শুনিলে, বোধ হয়, ঈশ্বর ভালই করিবেন।”
জয়নাল বলিলেন, “আপনিও কি এজিদের নামে খোৎবা পড়িতে অনুমতি করেন?”
“আমি অনুমতি করি না; তবে ইহা বলিতে পারি যে, তোমার মুক্তির জন্য আমরা সকলে প্রাণ দিতে প্রস্তুত আছি। এক দিন খোৎবা-পড়িলেই যদি তুমি সপরিবারে বন্দীগৃহ হইতে মুক্তিলাভ করিতে পার, মদিনার সিংহাসনে নির্ব্বিবাদে বসিতে পার, তবে তাহাতে ক্ষতি কি ভাই? আরও