পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু ২৭৭
উদ্ধার পর্ব্ব—পঞ্চম প্রবাহ

এক কথা, তুমি ইচ্ছা করিয়া এই কুকার্যে রত হইতেছ না। এ পাপ তোমাকে স্পর্শ করিবে না।”

 “সামান্য কারামুক্তি আর মদিনার রাজ্যলাভের জন্য আমি এজিদের নামে খোৎবা পড়িব? এ বন্দীগৃহ হইতে মুক্তির জন্য ভয় কি? শক্তি থাকিলেই মুক্তি হইবে। যদি কেহ রাজ্য কাড়িয়া লইয়া থাকে, তাহার নিকট ভিক্ষা করিয়া রাজ্যগ্রহণ করা অপেক্ষা অস্ত্রে তাহার মস্তক নিপাত করাই শ্রেয়ঃ—এই আমার কথা।”

 সালেমা বিবি জয়নালের মুখে শত শত চুম্বন পুর্ব্বক আশীর্বাদ করিয়া বলিলেন, “তোমার মনস্কামনা সিদ্ধ হউক। ঈশ্বর তোমার মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করুন?”

 মারওয়ান বলিতে লাগিল, “আপনারা এরূপ গোলযোগ করিলে কোন কার্য্যই সিদ্ধ হইবে না। আর সময় নাই; যদি মদিনা যাইবার ইচ্ছা থাকে, এজিদের হস্ত হইতে পরিত্রাণের আশা থাকে, জয়নালকে খোৎবা পাঠ করিতে প্রেরণ করুন। ইহাতে সম্মত না হন, আমার অপরাধ নাই, আমি নাচার।”

 সালেমা বিবি বলিলেন, “জয়নাল! তুমি ঈশ্বরের নাম করিয়া মসজিদে ধাও! তোমার ভাল হইবে।”

 জয়নাল আবেদীন বলিলেন, “আপনি যাইতে আজ্ঞা করিলেন?”

 “হ্যাঁ, আমি যাইতে আজ্ঞা করিলাম। তোমার কোনও চিন্তা নাই। আরও একটি কথা বলিতেছি, শুন। শুনিয়া মনে মনে বিচার করিলেই ভাল মন্দ বুঝিতে পারিবেঃ একদা তোমার পিতামহ হজরত আলী কাফেরদিগের সহিত যুদ্ধ করিতে আম্বাজ নামে এক নগরে গমন করিয়াছিলেন। সেখানে যাইয়া তিনি শুনিলেনঃ সে দেশ পুরুষাধিকারে নহে, হানুফা নামে একজন রাজ্ঞীর অধিকারভুক্ত। আরও আশ্চর্য কথা এই যে,—রাজ্ঞী সে পর্য্যন্ত বিবাহ করেন নাই; তাঁহার পণ এই,—বাহুযুদ্ধে যিনি তাহাকে পরাস্ত করিবেন, তাঁহাকেই তিনি পতিত্বে বরণ করিবেন। আর রাজ্ঞী জয়ী হইলে পরাজিত পক্ষকে আজীবন দাসত্ব স্বীকার করিয়া তাঁহার দাসের মত থাকিতে হইবে। মহাবীর আলী