পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৮৩
উদ্ধার পর্ব্ব—সপ্তম প্রবাহ

উদয় হয় না। যেন তেন প্রকারেণ পাপকুলে ডুবিতে পারিলেই সে এক প্রকার রক্ষা পায়, কিন্তু পরক্ষণে অবশ্যই তাহার আত্মগ্লানি উপস্থিত হয়।

 পাঠক! লেখনীর গতি বড় চমৎকার! ষষ্ঠ প্রবাহে আপনাদিগকে কোথায় লইয়া গিয়াছি, আবার সপ্তম প্রবাহে কোথায় আনিয়াছি! সম্মুখে পবিত্র রওজা—পুণ্যভূমি মদিনার সেই রওজা। পবিত্র রওজার মধ্যে অন্য লোকের গমন নিষেধ, একথা আপনারা পূর্ব্ব হইতেই অবগত আছেন। আর যাহার জন্য উপরে কয়েকটি কথা বলা হইল, সে আগন্তুককে কি করিতে দেখিতেছেন? সে পাপী পাপ-মোচনের জন্য এখন কি কি করিতেছে,—দেখিতেছেন? সে রওজার বহির্ভাগস্থ মৃত্তিকার ধূলি অবনতমুখে মন্তকে মর্দন করিতেছে, আর বলিতেছে, “প্রভু রক্ষা কর। হে হাবিবে খোদা, আমায় রক্ষা কর। হে নুরনবী হজরত মোহাম্মদ! আমায় রক্ষা কর। তুমি ঈশ্বরের প্রিয় বন্ধু। তোমার নামের গুণে নরকাগ্নি নরদেহের নিকটে আসিতে পারে না। তোমার রওজার পবিত্র ধূলিতে শত শত জরাগ্রস্ত, মহাব্যাধিগ্রস্ত ব্যক্তি নীরোগ হইয়া সুকান্তি লাভ করিতেছে, তাহাদের সাংঘাতিক বিষের বিষাক্ত গুণ হ্রাস পাইতেছে। সেই বিশ্বাসে এই নরাধম পাপী বহু কষ্টে পবিত্র ভূমি মদিনায় আসিয়াছে। যদিও আমি প্রভু হোসেনের প্রতি অমানুষিক ব্যবহার করিয়াছি,—দয়াময়! হে দয়াময় জগদীশ! তোমার করুণা-বারি পাত্রভেদে নিপতিত হয় না! দয়াময়! তোমার নিকট সকলই সমান। জগদীশ! এই পবিত্র রওজার ধূলির মাহাত্মে তুমি আমাকে রক্ষা কর।”

 ক্রমে এক দুই জন করিয়া জনতা বৃদ্ধি পাইতে লাগিল। আগন্তুকের আত্মগ্লানি ও মুক্তিকামনার প্রার্থনা শুনিয়া সকলেই সমুৎসুখ হইয়া,—কোথায় নিবাস, কোথা হইতে আগমন,—এই সকল প্রশ্ন তাহাকে করিতে লাগিল। অগম্ভক বলিল, “আমার দুর্দ্দশার কথা বলি। ভাই রে! আমি এমাম হোসেনের দাস। প্রভু যখন সপরিবারে কুফায় গমনের জন্য মদিনা হইতে যাত্রা করেন, তখন আমিও তাহার সঙ্গে ছিলাম। দৈব-নির্ব্বন্ধে কুফার পথ ভুলিয়া আমরা কারবালায় যাই।”