পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু ২৮৪
২৮৪

 সকলে মহাব্যস্তে বলিল-“তার পর? তার পর??”

 “তার পর কারবালায় যাইয়া দেখি যে, এজিদ-সৈন্য পূর্ব্বেই আসিয়া ফোরাত নদীকূল ঘিরিয়া রাখিয়াছে। এক বিন্দু জল লাভের আর আশা নাই। আমার দেহ মধ্যে কে যেন আগুন জ্বালিয়া দিয়াছে। সমুদয় বৃত্তান্ত আমি একটু সুস্থ না হইলে বলিতে পারিব না। আমি জ্বলিয়া পুড়িয়া মরিলাম।”

 মদিনাবাসীরা আরও ব্যস্ত হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “তারপর কি হইল, বল; জল না পাইয়া কি হইল?”

 “আর কি বলিব রক্তারক্তি, ‘মার মার’, ‘কাট কাট’ আরম্ভ হই; প্রভাত হইতে সন্ধ্যা পর্যন্ত কেবলি তরবারি চলিল; কারবালার মাঠে রক্তের স্রোত বহিতে বাগিল, মদিনার কেহই বাঁচিল না।”

 “ইমাম হোসেন, ইমাম হোসেন?”

 “ইমাম হোসেন সীমার হস্তে শহীদ হইলেন।”

 সমস্বরে আর্ত্তনাদ ও সজোরে বক্ষে করাঘাত হইতে লাগিল। মুখে “হায় হোসেন! হায় হোসেন!” শব্দ নির্গত হইল।

 কেহ কাঁদিতে কাঁদিতে বলিতে লাগিল, “আমরা তখনই হজরতকে বারণ করিয়াছিলাম, বলিয়াছিলাম মদিনা পরিত্যাগ করিবেন না। নূরনবী হজরত মোহাম্মদের পবিত্র রওজা পরিত্যাগ করিয়া কোনও স্থানে যাইবেন না।”

 কেহ আর কোন কথা না শুনিয়া ইমাম-শোকে কাঁদিতে কাঁদিতে পথ বাহিয়া যাইতে আরম্ভ করিলেন। কেহ কেহ ঐ স্থানে মাথায় হাত দিয়া বসিয়া পড়িলেন। কেহ জিজ্ঞাসা করিলেন, “তারপর, যুদ্ধ অবসানের পর কি হইল?”

 “যুদ্ধের অবসানের পর কে কোথায় গেল, কে খুঁজিয়া দেখে?” স্ত্রীলোকদিগের মধ্যে যাঁহারা বাঁচিয়াছিলেন, তাহাদিগকে ধরিয়া ধরিয়া উটে চড়াইয়া দামেস্কে লইয়া যাওয়া হইল। জয়নাল আবেদীন যুদ্ধে যান নাই, মারাও পড়েন নাই। আমি জঙ্গলে পলাইয়াছিলাম। যুদ্ধ শেষে ইমামের সন্ধান করিতে রণক্ষেত্রে, শেষে ফোরাত নদীর তীরে