পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৮৫
উদ্ধার পর্ব্ব—সপ্তম প্রবাহ

গিয়া দেখি যে, এক বৃক্ষ-মূলে হোসেনের দেহ পড়িয়া আছে। কিন্তু মন্তক নাই। রক্তমাখা খঞ্জরখানিও ইমামের দেহের নিকট পড়িয়া আছে। আমি পূর্ব হইতেই জানিতাম যে, ইমামের পায়জামার বন্ধ মধ্যে বহুমূল্য একটি মুক্তা থাকিত। সেই মুক্তা-লোভে দেহের নিকট গিয়া যেমন বন্ধ খুলিতেছি অমনি ইমামের বামহস্ত আসিয়া সজোরে আমার দক্ষিণ হস্ত চাপিয়া ধরিল। আমি মহা ভীত হইলাম, সে হাত কিছুতেই ছাড়িল না। মুক্তা হরণ করা দূরে থাকুক, আমার প্রাণ লইয়াই টানাটানি! সাত পাঁচ ভাবিয়া নিকটস্থ খঞ্জর বাম হস্তে উঠাইয়া সেই পবিত্র হস্তে আঘাত করিতেই হাত ছাড়িয়া গেল। কিন্তু কর্ণে শুনিলাম,—“তুই অনুগত দাস হইয়া আপন প্রভুর সহিত এই ব্যবহার করিলি? সামান্য মুক্তা-লোভে ইমামের হস্তে আঘাত করিলি? তোর শাস্তি—তোর মুখ কৃষ্ণবর্ণ কুকুরের মুখে পরিণত হউক, জগতেই নরকাগ্নির তাপে তোর অন্তর, মর্ম্ম, দেহ সর্ব্বদা জ্বলিতে থাকুক।”

 “এই আমার দুর্দ্দশা, এই আমার মুখের আকৃতি দেখুন। আমি আর বাঁচিব না, সমুদয় অঙ্গে যেন আগুন জ্বলিতেছে। আমি পূর্ব্ব হইতেই জানি যে, হজরতের রওজার ধূলি গায়ে মাখিলে মহারোগও আরোগ্য হয়, জ্বালা-যন্ত্রণা সকলই কমিয়া জল হইয়া যায়। সেই ভরসাতেই মহাকষ্টে কারবালা হইতে এই পবিত্র রওজায় আসিয়াছি।”

 মদিনাবাসিগণ এই পর্য্যন্তু শুনিয়াই আর কেহ তাহার দিকে ফিরিয়া চাহিলেন না। সকলেই ইমাম-শোকে কাতর হইলেন। নগরের প্রধান প্রধান এবং রাজসিংহাসন সংস্রবী মহোদয়গণ সেই সময়ে নগর মধ্যে ঘোষণা করিয়া, কি কর্ত্তব্য স্থির করিবার জন্য রওজার নিকটস্থ উপাসনামন্দির সম্মুখে মহাসভা আহ্বান করিয়া একত্রিত হইলেন।

 কেহ বলিলেন, “এজিদকে বঁধিয়া আনি।”

 কেহ বলিলেন, “দামেস্ক-নগর ছারখার করিয়া দিই।”

 বহু তর্ক-বিতর্কের পর শেষে সুস্থির হইল, “নায়ক-বিহনে সবাই প্রধান; এ অবস্থায় ইহার কোন প্রতিকারই হইবে না। সেই কারণে মদিনার