পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৮৭
উদ্ধার পর্ব্ব—সপ্তম প্রবাহ

তাহাই রহিল। জয়নাল আবেদীনের উদ্ধার এবং এজিদের সমুচিত শাস্তি বিধান না করিয়া আর এ শোক-সিন্ধুর প্রবল তরঙ্গের প্রতি কখনই দৃষ্টিপাত করিব না। আঘাত লাগুক, প্রতিঘাতে অন্তর ফাটিয়া যাউক, মুখে কিছুই বলিব না। কিন্তু সকলেই ঘরে ঘরে যুদ্ধ-সাজের আয়োজনে প্রবৃত্ত হও।”

 এই প্রস্তাবে সকলে সম্মত হইয়া সভাভঙ্গ করিলেন। হোসেন শোকে সকলেই অন্তরে কাতর; কিন্তু নিতান্ত উৎসাহে যুদ্ধসজ্জার আয়োজনে ব্যাপৃত রহিলেন। নগরবাসিগণের অঙ্গে, দ্বিতল—ত্রিতল গৃহদ্বারে এবং গবাক্ষে শোক-চিহ্ন! নগরের প্রান্তসীমায় শোকসূচক ঘোর নীল বর্ণ নিশান উড্ডীয়মান হইয়া জগৎকে কাঁদাইতে লাগিল।

 এদিকে দামেস্কনগরে আবার রণভেরী বাজিয়া উঠিল। এজিদের লক্ষাধিক সৈন্য সমর-সাজে সজ্জিত হইয়া মদিনাভিমুখে যাত্রা করিল। হানিফার মদিনা-আক্রমণের পূর্ব্বেই সৈন্যগণ মদিনার প্রবেশ-পথে অবস্থিত হইয়া তাঁহার গমনে বাধা দিবে, ইহাই মারওয়ানের মন্ত্রণা। মোহাম্মদ হানিফা প্রথমে কারবালায় গমন করিবেন, তৎপরে মদিনায় না যাইয়া, মদিনাবাসীদের অভিমত না লইয়া, হজরতের রওজা পরিদর্শন না করিয়া কখনই দামেস্ক আক্রমণ করিবেন না—ইহাই মারওয়ানের অনুমান। সুতরাং মদিনার প্রবেশপথে সৈন্য সমবেত করিয়া রাখাই আবশ্যক এবং সে প্রবেশ পথে হানিফার দর্প চূর্ণ করিয়া তাঁহার জীবন শেষ করাই যুক্তি-যুক্ত—এই সিদ্ধান্তই নির্ভুল মনে করিয়া এজিদ মারওয়ানের অভিমতে মত দিলেন;—তাই আবার রণভেরী বাজিয়া উঠিল। ওত্‌বে অলীদ দামেস্ক হইতে আবার মদিনাভিমুখে সসৈন্যে চলিল। হানিফার প্রাণ-বিনাশ, কিম্বা তাঁহাকে বন্দী করিয়া দামেস্কে প্রেরণ না করা পর্য্যন্ত সে মদিনা আক্রমণ করিবে না—কারণ, মোহাম্মদ হানিফাকে পরাস্ত না করিয়া, মদিনার সিংহাসন লাভ করিলে, কোন লাভই নাই, বরং নানা বিঘ্ন, নানা আশঙ্কা। এই যুত্তির উপর নির্ভর করিয়াই ওত্‌বে অলীদ নির্ব্বিঘ্নে যাইতে থাক্, আমরা একবার হানিফার গম্যপথ দেখিয়া আসি।