পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
২৯০

মদিনায় যাইবার আর সাধ্য নাই—প্রথমে যুদ্ধ, পরে প্রবেশ, তার পর মদিনাবাসীদিগের সহিত সাক্ষাৎ!

 গাজী রহ্‌মান বলিলেন, “তবে যুদ্ধ অনিবার্য্য। যেখানে বাধা সেই খানেই সমর, এ ত বিষম ব্যাপার! অলীদ চতুরতা করিয়া এমন কোন স্থানে যদি শিবির নির্ম্মাণ করিয়া থাকে যে, সম্মুখে সুপ্রশস্ত সমতল ক্ষেত্র নাই, শিবির নির্ম্মাণের উপযুক্ত স্থান নাই, জলের সুযোগ নাই, সৈনিক দিগের দৈনিক ক্রীড়া করিবার উপযুক্ত প্রাঙ্গন নাই, তবে ত মহাবিপদ! তাই অগ্রেই গুপ্তচর, চিত্রকর এবং কুঠারধারিগণকে ছদ্মবেশে প্রেরণ করিতে হইতেছে।”

 মোহাম্মদ হানিফা বলিলেন, “আমার মতি স্থির নাই, যাহা ভাল বিবেচনা হয় কর। তবে এইমাত্র কথা যে, বিপদে, সম্পদে, শোকে, দুঃখে সর্ব্বদা সকল সময়ে যিনি ভগবান—তাঁহারই নাম করিয়া চলিতে থাক। যাহা অদৃষ্টে আছে ঘটিবে। আর এখান হইতে আমার আর আর বৈমাত্রেয় ভ্রাতৃগণ যাঁহারা যেখানে আছেন, তাঁহাদিগকে ইমামের অবস্থা, ইমাম পরিবারের অবস্থা বিস্তারিতরূপে লিখিয়া কাসেদ পাঠাও। একথাও লিখিয়া দাও যে, পদাতিক; অশ্বারোহী প্রভৃতি যত প্রকার যোদ্ধা যাঁহার অধীনে যত আছে, তাহাদের আহার সংগ্রহ করিয়া মদিনা-প্রান্তরে আসিয়া আমার সঙ্গে তাঁহারা খোগদান করুন। ইরাক নগরে মস্‌হাব-কাক্কা, আঞ্জাম নগরে ইব্রাহিম ওয়াদি, তোগান রাজ্যে আলিওয়দের নিকটে সমুদয় বিবরণ লিখিয়া কাসেদ প্রেরণ কর। আর আর মুসলমান রাজা যিনি যে প্রদেশে, যে নগরে রাজ্য বিস্তার করিয়া আছেন, তাঁহাদের নিকটেও এই সমাচার লিখিয়া কাসেদ প্রেরণ কর। শেষে এই কয়েকটি কথা লিখিও: “ভ্রাতৃগণ! যদি জাতীয় ধর্ম্ম-রক্ষার বাসনা থাকে, জগতে মোহাম্মদীয় ধর্ম্মের স্থায়িত্ব রাখিতে ইচ্ছা থাকে, কাফেরের রক্তে ইসলাম-অস্ত্র রঞ্জিত করিতে ইচ্ছা থাকে, আর প্রভু মোহাম্মদের প্রতি যদি অটল ভক্তি থাকে, তবে এই পত্র প্রাপ্তিমাত্র আপন আপন সৈন্যসহ মদিনাপ্রান্তরে আসিয়া উপস্থিত হউন। প্রভু-পরিবারের প্রতি যে দৌরাত্ম্য হইতেছে, সে বিষয় আলোচনা করিয়া