পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
২৯২

গুহায় অলীদ লুকাইয়াছিল, এ সেই পর্ব্বত। শৈলশিখরে বিহার করিবে, প্রকৃতির স্বাভাবিক শােভা দেখিয়া নয়ন পরিতৃপ্ত করিবে—এই আশাতেই এখানে অলীদের আগমন। আশার অভ্যন্তরে যে, একটু স্বার্থ না আছে, তাহাও নহে। স্বাভাবিক দৃষ্টির বহির্ভূত যদি কোন ঘটনা ঘটিবার লক্ষণ প্রকাশ পায়, প্রত্যক্ষভাবে তাহা দেখিবার জন্য দূরদর্শন যন্ত্রও অলীদ সঙ্গে আনিয়াছে। সমতলক্ষেত্রে অশ্বতরসকল রাখিয়া কয়েকজন অনুচরসহ সে পর্ব্বতে আরােহণ করিল। প্রথমে মদিনা নগরের দিকে যন্ত্রের সাহায্যে নীরিক্ষণ করিয়া দেখিল—নীল পতাকাসকল উচ্চ মঞ্চে উড়িয়া হােসেনের মৃত্যু-সংবাদ ঘােষণা করিতেছে; অন্য দিকে দেখিল,—খর্জ্জুর বৃক্ষের শাখাসকল বাত্যাঘাতে উন্মত্ত ভাব ধারণ করিয়া হােসেনের শােকে মহাশােক প্রকাশ করিতেছে। তাহার পর সম্মুখ দিকে নীরিক্ষণ করিতেই তাহার হস্ত কাঁপিয়া গেল। সে যন্ত্রটি সুবিধা মত ধরিয়া দেখিল, কিন্তু সন্দেহ ঘুচিল না। আবার বিশেষ মনােযােগের সহিত দেখিল, সন্দেহ ঘুচিয়া নিশ্চিন্ত সাব্যস্ত হইল। এখন কথা,—এ কাহার সৈন্য এমন সুসাজে সুসজ্জিত হইয়া মদিনাভিমুখে আসিতেছে, এ সৈন্যশ্রেণী কাহার? তুরঙ্গগুলি গায়ে গায়ে মিশিয়া নৃত্য করিতে করিতে অগ্রসর হইতেছে; অশ্বারােহীদের অশ্ব-পৃষ্ঠে বসিবারই কি পরিপক্কতা, অস্ত্র ধরিবারই বা কি পারিপাট্য! বেশভূষা, কান্তি, গঠন অতি চমৎকার, মনােহর এবং নয়ন তৃপ্তিকর। ইহারা কে?—শত্রু না মিত্র? আবার দূর-দর্শন যন্ত্রে চক্ষু দিয়া সঙ্গীগণকে অলীদ বলিল, “তােমরা একজন শীঘ্র শিবিরে যাইয়া শ্রেণীবিভাগের অধ্যক্ষগণকে সংবাদ দাও যে, অর্দ্ধচন্দ্র আর পূর্ণতারকাসংযুক্ত পতকা গগনে দেখা গিয়াছে, প্রস্তুত হও।”

 আজ্ঞামাত্র তাহার একজন সহচর দ্রুতগতি তুরঙ্গপৃষ্ঠে আরােহণ করিয়া প্রস্থান করিল।

 অলীদ আবার দূর-দর্শন যন্ত্রে মনােনিবেশ করিল। আগন্তুক সৈন্যগণ আর অগ্রগামী হইতেছে না,—শ্রেণীবদ্ধভাবে নানা শ্রেণীতে বিভক্ত হইয়া দণ্ডায়মান রহিল। অলীদ আরও দেখিল যে, একজন আরোহী দ্রুতবেগে