পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
২৯৪

 এই সকল কথা হইতেছে, এমন সময় বিপক্ষ দূত শিবির দ্বারে আসিয়া উপস্থিত। মোহাম্মদ হানিফার আজ্ঞায় বিপক্ষ-দূত সমাদরে আহূত হইয়া শিবির-মধ্যে প্রবেশ করিলেন। বিশেষ সম্মানের সহিত অভিবাদন করিয়া দুতবর বলিলেন, “বাদশাহ্-নামদার! মহারাজ এজিদের আজ্ঞা এই যে, সংস্রবশূন্য নগরে প্রবেশ করিতে, বিশেষতঃ সৈন্যসামন্তসহ পর-রাজ্যে আসিতে স্থানীয় রাজার অনুমতি আবশ্যক। আপনি সে অনুমতি গ্রহণ করেন নাই; সুতরাং আর অগ্রসর হইবেন না। আর একপদ ভূমি অগ্রসর হইলেই রাজপ্রতিনিধি মহাবীর অলীদ আপনার গমনে বাধা দিতে সৈন্যসহ অগ্রসর হইবেন। আর আপনি যদি হোসেন পরিবারের সাহায্যের জন্য আসিয়া থাকেন, তবে নূন্যতা স্বীকার পূর্ব্বক স্বদেশে ফিরিয়া যাইবার প্রার্থনা করিলেও যাইতে পারিবেন না, আপনাকে বন্দীভাবে দামেস্কে যাইতে হইবে।”

 দূতবর নিজ প্রভুর আজ্ঞা প্রকাশ করিয়া নতশিরে পুনরায় অভিবাদন করিয়া দণ্ডায়মান হইলে গাজী রহ্‌মান বলিতে লাগিলেন,—“দূতবর! তোমাদের রাজ-প্রতিনিধি বীরবর অলীদ মহোদয়কে গিয়া বল, নিজের রাজ্যে প্রবেশ করিতে কেহ কাহারও অনুমতির অপেক্ষা করে না; হোসেনের পরিজনকে কারাগার হইতে উদ্ধার করাই আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য এবং হাসান-হোসেনের প্রতি যিনি যে প্রকার ব্যবহার করিয়াছেন, তাহার সমুচিত প্রতিবিধান করিতে আমরা কখনই ভুলিব না। পৈতৃক দামেস্ক-রাজ্য, মারিয়ার পুত্র এজিদ যাহা নিজ রাজ্য বলিয়া দামেস্ক-সিংহাসনের অবমাননা করিয়াছে, তাহার সমুচিত শাস্তিবিধান করিব। মদিনায় প্রবেশ করিয়া আমাদের গতি ক্ষান্ত হইবে না। অলীদের লক্ষাধিক সৈন্যশোণিতে আমাদের চিরপিপাসু তরবারির শোণিত-পিপাসা মিটিবে না! এজিদের এক একটি সৈন্য-শরীর শত খণ্ডে খণ্ডিত করিলেও আমাদের তরবারির তেজ কমিবে না, ক্রোধ নিবৃত্ত হইবে না। বন্দীভাবে আমাদিগকে দামেস্কে পাঠাইতে হইবে না—এই সজ্জিত বেশে, এই বীরবেশে, বিজয় নিশান উড়াইয়া রণভেরী বাজাইতে বাজাইতে শৃগাল-কুকুরের ন্যায় শত্রুবধ করিতে