পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৯৫
উদ্ধার পর্ব্ব—নবম প্রবাহ

করিতে আমরা দামেস্ক-নগরে প্রবেশ করিব। আমাদের বিশ্রাম-বিরাম-ক্লান্তি—কিছুই নাই। এখনই মদিনায় প্রবেশ করিব। তুমি শিবিরে যাইতে না যাইতেই দেখিবে—যুদ্ধনিশান উড়িতেছে, আমরাও শিবিরের নিকটবর্ত্তী।

 দূতবর নতশিরে অভিবাদন করিয়া বিদায় লইলেন। তাঁহার শিবির হইতে বহির্গত হওয়ামাত্রই সুনীল আকাশে মোহাম্মদ হানিফার পক্ষে লোহিত ধ্বজা উড়িতে লাগিল। ঘোররবে রণভেরী বাজিয়া উঠিল। কাড়া-নাকাড়া ও ডঙ্কা-ঝাঁঝরী শারদীয় ঘনঘটাকে পরাজিত করিয়া চতুর্দ্দিক আলোড়িত করিয়া তুলিল। তুরঙ্গসকল কর্ণ উচ্চ করিয়া পুচ্ছগুচ্ছ স্বাভাবিক ঈষৎ বক্রভঙ্গিতে হ্রেষারবে নৃত্য করিতে করিতে অগ্রসর হইতে লাগিল। পদাতিক সৈন্যরাও বীরদর্পে পদক্ষেপন করিতে লাগিল। বহু দূর ব্যপিয়া তাহা প্রতিধ্বনিত হইতে লাগিল। মোহাম্মদ হানিফার অন্তরে ভ্রাতৃবিয়োগ-শোক, পরিজনের কারারোধ-বেদনা বা জয়নালের উদ্ধার চিন্তার নাম এখন নাই। এখন একমাত্র চিন্তা-মদিনা-প্রবেশ ও হজরত নূরনবী মোহাম্মদের রওজা “জিয়ারত” (ভক্তি দর্শন)। কিন্তু তাঁহার মুখের ভাব দেখিলে বোধ হয়, তিনি নিশ্চিন্তভাবে সৈন্যশ্রেণীকে উৎসাহের দৃষ্টান্ত, সাহসের আদর্শ, বীরজীবনের উপমা দর্শন করাইয়া মহানন্দে অশ্ব চালাইয়া যাইতেছেন। এজিদপক্ষেও সমর-প্রাঙ্গন সীমায় নির্দ্দিষ্ট লোহিত নিশান নীলাকাশে দেখা দিয়াছে। সৈন্যশ্রেণী সপ্তশ্রেণীতে পঞ্চ প্রকার ব্যূহ নির্ম্মাণ করিয়া দণ্ডায়মান হইয়াছে।—কোন ব্যূহ চতুষ্কোণে স্থাপিত, কোন ব্যূহ পশুপক্ষীর শরীরের আদর্শে গঠিত। আক্রমণ এবং বাধা উভয়ভাবেই অটল!

 গাজী রহ্‌মান বলিলেন,—অলীদ যে প্রকারে ব্যূহ নির্ম্মাণ করিয়া আক্রমণ ও বাধা দিতে দণ্ডায়মান, এ সময় একটু বিবেচনার আবশ্যক হইতেছে। আমাদের সৈন্যসংখ্যা অপেক্ষা বিপক্ষসৈন্য অধিক—তাহাতে সন্দেহ নাই। সম্মুখযুদ্ধে আমাদের আম্বাজী সৈন্যগণ সুদক্ষ। এত অধিক বিপক্ষ সৈন্যের মধ্যে পড়িয়া ব্যূহ ভেদ করিলেও আমাদের বিস্তর সৈন্যক্ষয় হইবে। কিছুক্ষণের জন্য শত্রুদিগকে দ্বৈরথ যুদ্ধে আহ্বান করাই