পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
২৯৮

উপযুক্ত সময়!” সিংহগর্জ্জনে মোহাম্মদ হানিফা আসিয়া জাফরের পৃষ্ঠপোষক হইলেন, অশ্বের দাপটে দামেস্ক সৈন্যগণ দূরে সরিয়া দাঁড়াইল।

 অলীদ দেখিল, মোহাম্মদ হানিফা স্বয়ং জাফরের পৃষ্ঠপোষক। দ্বিতীয় ব্যূহ ভগ্ন করিতে আদেশ করিয়া সে বলিল, “উভয়কে ঘিরিয়া কেবল তীর নিক্ষেপ কর। তরবারির আয়ত্তের মধ্যে কেহই যাইও না।

 আজ হানিফার মনের সাধ পূর্ণ হইল। ভ্রাতৃবিয়োগ জনিত শোক-চিহ্ন তিনি বিপক্ষ শোণিতে শীতল করিতে লাগিলেন। দূর হইতে তীর নিক্ষেপ করিয়া কি করিবে? তরবারির আঘাতে, দুল্‌দুলের[১] পদাঘাতে, জাফরের বর্শায় দামেস্ক সৈন্য তৃণবৎ উড়িয়া যাইতে লাগিল,—মরুভূমিতে রক্তের স্রোত বহিল। জগৎলোচন রবি সেই রক্তস্রোতের প্রতিবিম্বে আরক্তিম দেহে পশ্চিম গগনে লুক্কায়িত হইলেন। মোহাম্মদ হানিফা এবং জাফর শত্রু-বিনাশে বিরত হইয়া বেষ্টনকারী সৈন্যের এক পার্শ্ব হইতে কয়েকজনকে লোহিত বসন পরাইয়া সেই পথে নিজেদের শিবিরে প্রবেশ করিলেন। কার সাধ্য হানিফার সম্মুখে দাঁড়ায়। কত তীর, কত বর্শা, মোহাম্মদ হানিফার উদ্দেশে নিক্ষিপ্ত হইল,কিন্তু কিছুতেই কিছু হইল না।

 ওত্‌বে অলীদ প্রথম যুদ্ধ-বিবরণ, হানিফার বাহুবলের পরিচয়, তাঁহার তরবারি চালনার ক্ষমতা, বিস্তারিতরূপে লিখিয়া দামেস্ক নগরে এজিদের নিকট কাসেদ প্রেরণ করিল।

দশম প্রবাহ

 বিশ্রামদায়িনী নিশার দ্বিযাম অতীত। অনেকেই নিদ্রার ক্রোড়ে অচেতন। এ সময় কিন্তু আশা, নিরাশা, প্রেম, হিংসা, শোক, বিয়োগ, দুঃখ, বিরহ, বিচ্ছেদ, বিকার এবং অভিমানযুক্ত হৃদয়ের বড়ই কঠিন সময়। সে হৃদয়ে শান্তি নাই—সে চক্ষে নিদ্রা নাই। ঐ এজিদের মন্ত্রণাগৃহে দীপ


  1. হানিফার অশ্বের নাম