পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫
মহরম পর্ব্ব—তৃতীয় প্রবাহ

ধর্ম্মবিরুদ্ধ না হইলে কোন কার্য্যে তিনি বাধা দিবেন না; ইহাই যথেষ্ট। যে মন্ত্রণা করিয়া কার্য্য আরম্ভ করা হইয়াছে, যদি কৃতকার্য্য হইতে পারি, তবে আর অন্য পথে যাইবার আবশ্যক কি? একটা গুরুতর পাপভার মাথায় বহন করিবারই বা প্রয়োজন কি? নরহত্যা মহাপাপ।”

 হঠাৎ সাদিয়ানা বাদ্য বাজিয়া উঠিল। এজিদ কহিলেন, “অসময়ে আনন্দবাদ্য কি জন্য? বুঝি আবদুল জব্বার আসিয়া থাকিবে।” উভয়ে একটু ত্রস্তভাবে দরবার অভিমুখে অগ্রসর হইলেন। রাজকর্ম্মচারিগণের প্রতি যে যে প্রকার আদেশ দেওয়া হইয়াছিল, তৎসমস্তই প্রতিপালিত হইয়াছে। কোন বিষয়ে বিশৃঙ্খলা হয় নাই। দরবার পর্য্যন্ত গমনপথে শ্রেণীবদ্ধ সৈন্যগণ এখনও পর্য্যন্ত যথাস্থানে দণ্ডায়মান। তদ্দর্শনে তাঁহারা আরও অধিকতর উৎসাহে দ্রুতগতিতে গমন করিতে লাগিলেন। পথে কাসেদের সহিত দেখা হইল। কাসেদ সসম্ভ্রমে অভিবাদন করিয়া নিবেদন করিলেন, “রাজাদেশ প্রতিপালিত হইয়াছে। আবদুল জব্বার সমাদরে গৃহীত হইয়াছেন। মহারাজ আম-দরবার বরখাস্ত করিয়া আবদুল জব্বারের সহিত খোশমহলে বার দিয়াছেন।” এই কথা বলিয়া কাসেদ পুনরায় অভিবাদন পূর্ব্বক যথাস্থানে প্রস্থান করিলেন।

 এজিদ মারওয়ানের সহিত আনন্দ-মন্দিরে উপস্থিত হইয়া মহারাজাকে অভিবাদন করিলেন এবং রাজাজ্ঞা প্রাপ্তিক্রমে নির্দ্দিষ্ট স্থানে উপবেশন করিয়া আবদুল জব্বারের সহিত মহারাজের কথোপকথন শুনিবার অপেক্ষায় উৎসুক রহিলেন।

 আবদুল জব্বার বিশেষ সতর্কতার সহিত জাতীয় সভ্যতা রক্ষা করিয়া করজোড়ে মহারাজ সমীপে বসিয়া আছেন। পুত্রের পরামর্শমত এজিদের জননী স্বামীর নিকট যাহা বলিয়াছিলেন, যে প্রকার কথার প্রস্তাব করিতে পরামর্শ দিয়াছিলেন, মাবিয়া অবিকল সেইরূপ বলিতে লাগিলেন,—“আবদুল জব্বার। আমার ইচ্ছা, তোমাকে আমি সর্ব্বদা আমার নিকটে রাখি। কোন প্রকার রাজকার্য্যে নিযুক্ত রাখিতে ইচ্ছা করি না। কারণ, তাহাতে সময়ে সময়ে নানা প্রকার চিন্তায় চিন্তিত হইতে হইবে, মন্ত্রিদলের আজ্ঞানুবর্ত্তী হইতে হইবে। অথচ রাজনীতি অনুসারে কোন প্রকার পদমর্য্যাদা রক্ষা করা তোমার