পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দ্বাদশ প্রবাহ

 তুমি না সেনাপতি! ছিঃ ছিঃ সীমার। তুমি যে এক্ষণে এজিদের সেনাপতি! কি অভিমানে বীরবেশ পরিত্যাগ করিয়া ভিখারীর বেশ ধারণ করিয়াছ? উচ্চ পদ লাভ করিয়াও কি তােমার চির নীচ স্বভাব যায় নাই? ছিঃ ছিঃ! সেনাপতির এই কার্য্য? বল ত, আজ কোন্ কুসুম কাননের প্রস্ফুটিত কমল গুচ্ছসকল গোপনে হরণ করিতে ছদ্মবেশী হইলে? কি অভিপ্রায়ে অঙ্গে মলিন বসন,—স্কন্ধে ভিক্ষার ঝুলি,—শিরে জীর্ণ আস্তরণ?—এত কপটতা কার জন্য। তােমার অন্তরের কপাট তুমিই খুলিয়া দেখ। দেখ ত, বাহ্যিক বেশের সহিত তাহার কোন বর্ণেও সম্মিলন আছে কিনা? মনের কথা বল, খুলিয়া বল ত, তােমার পূর্ব্ব কথার সহিত কোন সমতা আছে কিনা? ও-হাতে আর অস্ত্র ধরিবে না,—ইহাই কি সত্য? সেই অভিমানেই কি এই বেশ? আজ যুদ্ধে পরাস্ত হইয়াছ বলিয়াই কি সৈন্যাধ্যক্ষের পদ পরিত্যাগ করিয়া বিরাগী হইয়াছ? কিন্তু সীমার, একটি কথা। সূর্য্যদেব অস্তাচলে গমন করিয়া দশ দিনের মধ্যে আর জগতে আসিবেন না,—বহু পরিশ্রমের পর কিছু বিশ্রাম করিবেন। বৎসরকাল আর বিধুর উদয় হইবে না, তাঁহার ক্রোড়স্থ মৃগশিশুটি হঠাৎ ক্রোড়স্খলিত হইয়া পড়িয়া মরিয়া গিয়াছে! সেই দুঃখে তিনি মহাকাতর —এ সকল অকথ্য, স্বভাবের বিপরীত কথাও বিশ্বাস করিতে পারি। কিন্তু সীমার? তােমার বাহ্যিক বৈরাগ্যভাব দেখিয়া তােমার অন্তরে বিরাগ, সংসারে ঘৃণা, ধর্ম্মে আস্থা জন্মিয়াছে, ইহা কখনও বিশ্বাস করিতে পারি না। সূর্য্যদেব মধ্যগগনে—উত্তাপ প্রখর। তুমি একাকী কোথায় যাইতেছ? ওদিকে তােমার প্রয়ােজন কি? ওরা যে তােমার শত্রু, শত্রু-শিবিরের দিকে এ বেশে কেন?

 সীমার অতি গম্ভীরভাবে যাইতেছে। শিবিরের দ্বারে উপস্থিত হইলেই প্রহরিগণ বলিল, “কোন প্রাণীর প্রবেশের অনুমতি নাই—তফাৎ যাও।”