পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩১১
উদ্ধার পর্ব্ব—ত্রয়োদশ প্রবাহ

ভস্মসাৎ হইয়া গেল। যাহারা এই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল, তাহারা কেহই মরিল না, শিবিরেও থাকিল না, সীমার-দলে মিশিয়া গেল। অবশিষ্টের মধ্যে যাহারা রহিল তাহার প্রাণ লইয়া পলাইল। কে জ্বলন্ত হুতাশন নিবারণ করে? কে প্রভুর অন্বেষণ করে? কে মন্ত্রীদের সন্ধান লয়? আপন আপন প্রাণ লইয়া সকলেই মহা ব্যস্ত।

 ভূপতিদ্বয়কে বন্ধন-দশাতেই শিবিরে লইয়া সীমার নির্দ্দিষ্ট আসনে বসিল। বন্দীদ্বয়ের বন্ধন, চক্ষের আবরণ মোচন করিয়া সে নিজের সম্মুখে তাহাদিগকে দণ্ডায়মান করাইল। চারি পার্শ্বে প্রহরী, পদমাত্র হেলিবার সাধ্য নাই। বন্দীদ্বয় চক্ষে দেখিলেন: তাঁহাদের কতক সৈন্য ঐ দলে দণ্ডায়মান,— মহাহর্ষে বক্ষ বিস্তার করিয়া দণ্ডায়মান! কিন্তু সীমারের আজ্ঞাবহ!!

 সীমার বলিল, “আপনার মহারাজ এজিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিতে হানিফার সাহায্যে মদিনা যাইতেছেন, সেই অপরাধে আপনারা অপরাধী এবং আমায় হস্তে বন্দী। মহারাজ এজিদ স্বয়ং আপনাদের বিচার করিবেন, ফলাফল তাঁহার হস্তে। আমি আপনাদিগকে এখনই দামেস্কে লইয়া যাইব। আপনারা বন্দী।” এই বলিয়া সে ভূপতিদ্বয়কে পুনর্ব্বার বন্ধন করিতে আজ্ঞা দিয়া দরবার ভঙ্গ করিল।

 সীমার-শিবিরে আনন্দের লহরী ছুটিল। সঙ্গে সঙ্গে প্রভাতের প্রতীক্ষা। —গত রজনীতে সীমার প্রভাতের প্রতীক্ষায় ছিল, এখনও প্রভাতের প্রতীক্ষা। শিবির সৈন্য, যাহারা পলাইয়া প্রাণরক্ষা করিয়াছিল, তাহাদেরও প্রভাতের প্রতীক্ষা! এ প্রভাত কাহার পক্ষে সুপ্রভাত হইবে, তাহা কে বলিতে পারে? দগ্ধীভূত শিবিরের অগ্নি এখনও নির্ব্বাপিত হয় নাই। কত সৈন্য নিদ্রার কোলে অচেতন অবস্থায় পুড়িয়া মরিয়াছে, কত লোক অর্দ্ধদগ্ধ অবস্থায় ছট ফট করিতেছে! ভূপতিদ্বয়ের অবস্থা কি হইল— তাঁহার পুড়িয়া খাক্ হইয়াছেন, কি পলাইয়া প্রাণ রক্ষা করিয়াছেন— পলায়িত সৈন্যগণ তাহার কিছুই জানিতে পারে নাই। যাহাদের সম্মুখে ভূপতিদ্বয়কে বাঁধিয়া লইয়া গিয়াছে, তাহারা কে কোথায় লুকাইয়া আছে, এখনও জানা যায় নাই।