পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৩১৬

মনে মনে স্থির করিল: ভূপতিদ্বয়কে ছাড়িয়া দিলেই বোধ হয়, মস্‌হাব কাক্কা যুদ্ধে ক্ষান্ত দিবেন। বাঁচিলে ত পদোন্নতি? আজ এই কালান্তক কালের হস্ত হইতে রক্ষা পাইলে ত অন্য আশা? অদৃষ্টে যাহাই থাকুক, ঘটনাস্রোত যে দিকে যায়, সেই দিকেই অঙ্গ ভাসাইব; এক্ষণে ভূপতিদ্বয়কে ছাড়িয়া দেওয়াই যুক্তিসঙ্গত।”

 সীমার ভূপতিদ্বয়কে নিস্কৃতি দিল। তোগান ও তুরস্কের ভূপতিদ্বয়কে দেখিয়া মস্‌হাব কাক্কা সাদরে ও মিষ্ট সম্ভাষণে বলিলেন, “ঈশ্বর আপনাদিগকে রক্ষা করিয়াছেন, আর চিন্তা নাই। সৈন্যসামন্ত, আহারীয় দ্রব্য, অর্থ ইত্যাদি যাহা ভস্মীভূত হইয়াছে, সে জন্য দুঃখ নাই। বিপদগ্রস্ত না হইলে নিরাপদে সুখ কখনই ভোগ করা যায় না; দুঃখভোগ না করিলে সুখের স্বাদ পাওয়া যায় না। ভ্রাতাগণ! কথা কহিবার অনেক সময় পাই, কিন্তু সীমার হাতছাড়া হইলে আর তাহাকে পাইব না। আপনারা আমার সাহায্যে অস্ত্রধারণ করুন। ঐ অশ্বসকল সজ্জিত আছে,—অস্ত্রের অভাব নাই! যে অস্ত্র লইতে ইচ্ছা করেন, রক্ষীকে আদেশ করিলেই সে তাহা যোগাইবে; বিলম্বের সময় নহে, শীঘ্র সজ্জিত হইয়া আমায় সাহায্য করুন, যুদ্ধে ব্যাপৃত হউন। দেখি, সীমার যায় কোথা?”

 সীমারের সেনাগণ সেনাপতির কাপুরুষতা দেখিয়া বলিয়া উঠিল, “ছিঃ। ছিঃ! আমরা কাহার অধীনতা স্বীকার করিয়াছি? এমন ভীরুস্বভাব নীচমনার আজ্ঞাবহ হইয়া সমরসাজে আসিয়াছি। ছিঃ! ছিঃ! এমন সেনাপতি ত কখনও দেখি নাই;—বিনাযুদ্ধে সৈন্য়ক্ষয় করিতেছে! কি কাপুরুষ! যুদ্ধ করিবার আজ্ঞাও মুখ হইতে বহির্গত হইতেছে না। ছিঃ! ছিঃ! এমন যোদ্ধা ত জগতে দেখি নাই! ধিক্‌ আমাদিগকে! এমন ভীরু-স্বভাব সেনাপতির অধীনে আর থাকিব না। চল ভ্রাতাগণ! চল, ঐ বীর-কেশরীর আজ্ঞাবহ হইয়া প্রাণরক্ষা করি; যদি বল, আমাদিগকে তাহারা বিশ্বাস করিবে না; বিশ্বাস না করুক, আগে পাছে উহাদের হাতেই মরণ—নিশ্চয় মরণ! চল, ঐ মহাবীর মস্‌হার কাক্কার পদানত হই, অদৃষ্টে যাহা থাকে হইবে।”

 সীমার-সৈন্যগণ “জয় মোহাম্মদ হানিফা! জয় মোহাম্মদ হানিফা!!”