পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৭
মহরম পর্ব্ব—তৃতীয় প্রবাহ

 মারওয়ান বলিলেন, “আপনার অঙ্গীকারে আমরাও পরমানন্দ লাভ করিলাম। সমস্তই প্রস্তুত, এখনই এই সভায় এই শুভলগ্নে শুভকার্য্য সুসম্পন্ন হউক।”

 পূর্ব্ব হইতেই এজিদ সমস্ত প্রস্তুত করিয়া রাখিয়াছেন। মারওয়ানকে ইঙ্গিত করিবামাত্র পুরোহিত, অমাত্যবর্গ, পরিজনবর্গ সকলেই একসঙ্গে উপস্থিত হইলেন। মঙ্গলবাদ্য বাজিতে লাগিল। পুরোহিতের আদেশমত এজিদ পাত্রীপক্ষের প্রতিনিধি সাব্যস্ত হইলেন; মারওয়ান এবং আবদুর রহমান সাক্ষী হইলেন।

 এই স্থানে হিন্দু পাঠকগণের নিকট কিছু বলিবার আছে। আমাদের বিবাহ-প্রথা একটু সংক্ষেপে বুঝাইয়া না দিলে, এ উপস্থিত বিবাহ-বিষয় বুঝিতে একটু আয়াস আবশ্যক হইবে। আমাদের বিবাহ না হওয়া পর্য্যন্ত পাত্রপক্ষীয় কোন পুরুষ কি স্ত্রীর পাত্রীকে দেখিবার প্রথা নাই।

 পাত্র পূর্ণবয়স্ক হইলে পুরোহিতের উপদেশক্রমে, যে দেশে হউক-না, কয়েকটি কথা আরবীয় ভাষায় উচ্চারণ করিতে হয়। পাত্রীপক্ষীয় অভিভাবকগণের মনোনীত প্রতিনিধিকে পাত্রের সেই কথাগুলির প্রত্যুত্তরস্বরূপ কয়েকটি কথা বলিতে হয়। বিবাহের মূল কথাই এই—প্রস্তাব আর স্বীকার (ইজাব-কবুল)। পাত্রী যে বিবাহে সম্মত হইয়াছেন, তাহার প্রমাণস্বরূপ দুইটি সাক্ষীর প্রয়োজন। তদ্ভিন্ন আমাদের বিবাহে অন্য কোন প্রকার ধর্মার্চ্চনা, কি মন্ত্রপাঠ, কি অন্য কোন প্রকারের ক্রিয়া কিছুই নাই। তবে লৌকিক প্রথানুসারে ধর্ম্মভাবে শিথিলপ্রযত্ন ব্যক্তিগণ, কি কেহ, আমোদর অঙ্গ মনে করিয়া যে কিছু অনুষ্ঠান করেন, তাহা শাস্ত্রসম্মত নহে। তাহা না করিলেও বিবাহ-বন্ধনের সুদৃঢ় গ্রন্থি শিথিল হয় না। নিয়ম-লঙ্ঘন-দোষে কোন প্রকার অমঙ্গল ভয়েও কোন পক্ষকে ভয়াতুর হইতে হয় না।

 প্রস্তাব বাহুল্যভয়ে এতদ্বিষয়ের আর অধিক আড়ম্বর নিষ্প্রয়োজন বোধ করি। তবে একটি স্থূল কথা ‘দেনমোহর’। অধুনা যে প্রকার লক্ষ লক্ষ টাকার দেনমোহর-প্রথা ভারতে মুসলমান-সমাজে প্রচলিত হইয়াছে, যে প্রথানুসারে স্বামীর যথাসর্ব্বস্ব কন্যার কোষগত করিয়া স্বামীকে পথের ভিখারী