পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৩২০

উম্মীলিত হয় নাই। শাহ্‌রেবানু, জয়নাব, বিবি সালেমা জয়নালের হাসিহাসি মুখখানির প্রতি স্থিরনেত্রে চাহিয়া আছেন। নিমেষশূন্য চক্ষে জলের ধারা বহিতেছে—অন্তরে, হৃদয়ে, শ্বাসে, প্রশ্বাসে সেই বিপদতারণ ভগবানের নাম, সহস্র বর্ণে, সহস্র প্রকারে, নিঃশব্দে বর্ণিত হইতেছে—জাগিতেছে।

 এজিদ বলিলেন, “জয়নাল! তোমার জীবনের এই শেষ সময়। কোন কথা বলিবার থাকে ত বল। তোমার পরমায়ু শেষ হইয়াছে। ঊর্দ্ধদৃষ্টিতে নীরবে আকাশ পানে চাহিয়া থাকিলে আর কি হইবে? আমি ভাবিয়াছিলাম, তুমি আমার বশ্যতা স্বীকার করিবে, আমার নামে খোৎবা পড়িবে, আমাকে রাজা বলিয়া মান্য করিবে, আমি তোমাকে ক্ষমা করিব! ঘটনাক্রমে তাহা ঘটিল না। কাজেই শত্রুর শেষ রাখিতে নাই—শত্রুকে হাতে পাইয়া ছাড়িতে নাই। আমি নিশ্চয় জানিয়াছি, তুমি আমার বশ্যতা স্বীকার করিবে না; এ অবস্থায় তোমাকে আর জীবিত মাখিতে পারি না। জীবিত রাখিয়া সর্ব্বদা সন্দিহান থাকা আমার বিবেচনায় ভাল বোধ হইল না। জয়নাল! ঊর্দ্ধে কি আছে? অনন্ত আকাশে সূর্য্য ভিন্ন আর কি আছে? তুমি আকাশে কি দেখ? আমায় দেখ! আমার হস্তস্থিত শাণিত কৃপাণের প্রতি চাহিয়া দেখ। তোমার মরণ অতি নিকট; যদি কোন কথা থাকে ত বল। আমি মনোযোগের সহিত শুনিব।”

 জয়নাল আবেদীন বলিলেন, “তোমার সহিত আমার কোন কথা নাই। আমার জীবনে মরণে তোমার সমান ফুল। আমি বাঁচিয়া থাকিলেও তোমার নিস্তার নাই, মরিলেও তোমার নিষ্কৃতি নাই, বন্দীখানায় থাকিলেও তোমায় উদ্ধার নাই।”

 এজিদ সরোষে বলিলেন, “এখনও স্পর্ধা! এখনও অহঙ্কার! এখনও ঘৃণা! এখনও এজিদকে ঘৃণা! এ সময়েও কথার বাঁধুনি। দেখ্ এজিদের নিষ্কৃতি আছে কি না? দেখ্ এজিদের উদ্ধার আছে কি না? জীবনে মরণে সমান ফল?—দেখ্ জীবনে মরণে সমান ফল। এই দেখ্ জীবনে মরণে সমান—”

 এজিদ তরবারি উত্তোলন করিতেই মারওয়ান বলিল, “বাদশাহ্