পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩২৫
উদ্ধার পর্ব্ব—পঞ্চদশ প্রবাহ

 গাজী রহ্‌মান বলিলেন, “সৈন্যগণ মহাক্লান্ত হইয়াছে। কি করিবে? এত মারিয়াও যখন শেষ করিতে পারিতেছে না, তখন আর উপায় কি?”

 মোহাম্মদ হানিফা অশ্ব-বল্গা ফিরাইয়া বলিলেন, “আজ উভয় দলেরই সৈন্য যে প্রকারে ক্ষয় হইতেছে, ইহাতে মহাবিপদের আশঙ্কা দেখিতেছি। এখন না নিবারণের উপায় আছে, না উপদেশের সময় আছে, না কথা বলিবার সময় আছে। অলীদের সমস্ত সৈন্য শেষ হইলেও অলীদ কখনই পরাভব স্বীকার করিবে না, আমরাও তাহাকে পরাস্ত না করিয়া ছাড়িব না।”

 এই প্রকার কথা হইতেছে, এমন সময় অলীদ-দলে আনন্দের বাজনা বাজিয়া উঠিল। ওত্‌বে অলীদ তাহার নূতন সৈন্যদলের ব্যবহারের জন্য যে সাজ প্রস্তুত করিয়াছিল, ঠিক সেইরূপ সাজে সজ্জিত সেনাগণ মস্‌হাব কাক্কার সঙ্গে আসিতেছিল। দূর হইতে তাহাদিগকে দেখিয়া আপন সেনা মনে করিয়া অলীদ মনের আনন্দে বাজনা বাজাইতে আদেশ করিয়াছিল; গাজী রহ্‌মানের কর্ণে হঠাৎ ঐ বাজনার রোল মহা বিপদজনক ও বিষম বোধ হইতে লাগিল। কারণ, উভয় দলই প্রমত্ত, কেহই পরাজয় স্বীকার করে নাই; এ সময়ে সন্তোষের বাজনা কেন? গাজী রহ্‌মানের বিশাল চক্ষু মদিনা-প্রান্তরের চতুর্দ্দিকে ঘুরিতে লাগিল, চিন্তাস্রোত খরতর বেগে বহিতে লাগিল,—পূর্ব্বদিকে দৃষ্টি পড়িতেই শরীর রোমাঞ্চিত হইল। যুদ্ধ-জয়ের আশা, মদিনা-প্রবেশের আশা, তাঁহার অন্তর হইতে একেবারে সরিয়া গেল।

 গাজী রহ্‌মান মোহাম্মদ হানিফাকে বলিলেন, “বাদশাহ্-নামদার। ঈশ্বরের অভিপ্রেত কার্য্যে বিপর্য্যয় ঘটাইতে মানুষের ক্ষমতা নাই। সৈন্যশ্রেণী যে প্রকারে চালনা করিয়াছিলাম, সৈন্যগণও যে বীর-বিক্রমে আক্রমণ করিয়াছিল, অতি অল্প সময় মধ্যে অলীদ বাধ্য হইয়া পরাভব স্বীকারে মদিনার পথ ছাড়িয়া দিত; আর সে যদি পথ না ছাড়িত, গাজী রহ্‌মানের হস্তে নিশ্চয়ই আজ বন্দী হইত। কিন্তু কি করি? ঐ দেখুন, উহারা যখন আমাদের পশ্চাদ্দিক হইতে আসিতেছে, তখন আর রক্ষার উপায় নাই। সম্মুখে, পশ্চাতে —উভয় দিকেই শত্রুসেনা, আর নিষ্কৃতি কোথা? নিশ্চয় আমরা বন্দী। আজ সৈন্যসহ আমরা নিশ্চয়ই বন্দী!!”