পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৩৩৪

 মস্হাব কাক্কা ধনুর্ব্বাণ হস্তে করিয়া উচ্চৈঃস্বরে বলিতে লাগিলেন, “সীমার! আজ তোমার সৃষ্টিকর্ত্তার নাম কর, তোমার কৃত সকল পাপ-কথা মনে কর। দেখিলে—জগৎ কেমন ভয়ানক স্থান? দেখিলে? একটু বিবেচনা করিয়া দেখিলে কর্ম্মফল কিঞ্চিৎ পরিমাণে এখানেই পাওয়া যায়। লোক অজ্ঞতা-তিমিরাচ্ছন্ন হইয়া ভবিষ্যতের জ্ঞান হাৱাইয়া অনেক কার্য্যে হস্তক্ষেপ করে। কিন্তু শেষ রক্ষা পায় কোথায়? কে রক্ষা করে? মাতা, পিতা, স্ত্রী-পরিবার, পরিজন কেহ কাহারও নহে!— আজ কে তোমার নিকট আসিয়া দাঁড়াইল? কে তোমার পক্ষ লইয়া দুইটা কথা বলিল। মোহ-তিমিরে কেমন আচ্ছন্ন হইয়াছিলে?—তোমার হৃদয় আকাশ কেমন ঘটনার দ্বারা আবৃত করিয়া রাখিয়াছিলে? তুমি একবার ভাব দেখি, নুরনবী মোহাম্মদের দৌহিত্র ইমাম হোসেনের মস্তক সামান্য অর্থলোভে স্বহস্তে ছেদন করিয়া তোমার কি লাভ হইল? আরও অনেকে তোমার সঙ্গে ছিল, তাহারাও যুদ্ধ জয় করিয়াছিল; কিন্তু ইমাম-শির দেহ হইতে বিচ্ছিন্ন করিতে কৈ কেহই ত অগ্রসর হয় নাই। ধিক্ তোমাকে। সীমার, শত ধিক্ তোমাকে!—তুমি জগৎ কাঁদাইয়াছ-পশুপক্ষীর চক্ষের জল ঝরাইয়াছ,—মানবহৃদয়ে বিষময় বিশাল শেলের আঘাত করিয়াছ। আকাশ-পাতাল, বন-উপবন, পর্ব্বত, বায়ু তোমার কুকীর্ত্তি কীর্ত্তন করিতেছে—সে রবে প্রকৃতি-বক্ষঃ পর্য্যন্ত ফাটিয়া যাইতেছে। কিন্তু তোমার পরিণাম-দশা তুমি কিছুই ভাব নাই। দেখ দেখি। আজ তোমার কোন দিন উপস্থিত? সীমার! তুমি কি ভাবিয়াছিলে যে, সে দিন-চিরদিনই, তোমার সুখসেব্য সুদিনই যাইবে। এক দিনও কি সে দিনের সন্ধ্যা হইবে না। দেখ দেখি, এখন কেমন কঠিন সময় উপস্থিত। সে পবিত্র মস্তক পবিত্র দেহ হইতে ছিন্ন করিতে খঞ্জর দ্বারা কত কষ্ট দিয়াছ। সে যাতনা সহ্য করিতে না পারিয়া প্রভু কি প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলেন,— মনে হয়? ওরে পাপিষ্ঠ নরাধম! ইমামের মুমুর্ষু অবস্থার কথা মনে হয়? তোমাকে নারকী বলিতে পারি না। পরকালের জন্য যে, তোমার চিন্তা নাই, তাই আমরা বিশেষ করিয়া