পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৩৩৮

ক্রমেই আগুন দ্বিগুণ ত্রিগুণরূপে জ্বলিয়া উঠিল। সৈন্যহারা, মিত্রহারা রাজ্যহারা, ক্রমে সর্ব্বস্বহারা হইবার উপক্রম হইয়া উঠিল! ধিক্‌ রমণীর রূপে! শত ধিক্ কু-প্রেমাভিলাষী পুরুষে! সহ ধিক্ পরস্ত্রী-অপহারক রাজায়!”

 এই পর্য্যন্ত বলিতেই মারওয়ান উপস্থিত হইয়া যথাবিধি সম্ভাষণ করিল। এজিদ অন্যমনস্কভাবে জিজ্ঞাসা করিলেন, “সীমারের কি হইল?”

 “মহারাজ! সীমার যখন বিপক্ষদলের হস্তগত হইলেন, তখন তাঁহার আশা এক প্রকার পরিত্যাগ করিতে হইবে। এখন ওত্‌বে অলীদের রক্ষা, রাজ্যরক্ষা, প্রাণরক্ষা,—এই সকল রক্ষার উপায় চিন্তা করাই অগ্রে কর্ত্তব্য। সীমার উদ্ধারের, সীমারের আশা আর করিবেন না। কারণ, সীমার মোহাম্মদ হানিফার হস্তগত হইলে তাহার রক্ষা কিছুতেই নাই।”

 “তবে কি সীমার নাই?”

 “সীমার নাই—একথা বলিতে পারি না। তবে অনুমানে বোধ হয় যে, সীমার মোহাম্মদ হানিফার হস্তে পড়িয়াছে। সুতরাং সীমার-উদ্ধারের চিন্তা না করিয়া অলীদ-উদ্ধারের চিন্তাই এক্ষণে আবশ্যক হইয়াছে। তাহার পর এ কয়েক দিনে যদি অলীদ বন্দী হইয়া থাকে, কি যুদ্ধে পরাস্ত হইয়া আত্মসমর্পণ করিয়া থাকে, তবে প্রথম চিন্তা দামেস্ক-রাজ্য রক্ষা—আপনার প্রাণরক্ষা। আপন সৈন্য যখন বিপক্ষদলে মিশিয়াছে, তখন দুঃসময়ের পূর্ব্ব-চিহ্ন, দুরাবস্থার পূর্ব্বলক্ষণ সম্পূর্ণ বিপদের সূচনা দেখাইয়া অমঙ্গলকে আহ্বান করিতেছে। আমাদের সৌভাগ্য-শশী চিররাহুগ্রস্ত হইবে বলিয়াই জগতের অন্ধকার ছায়ার দিকে ক্রমশঃই সরিতেছে।”

 এজিদের কর্ণে কথা কয়টি বিষসংযুক্ত সূচিকার ন্যায় বিগ্ধ হইল। তাহার মনের পূর্ব্বভাব কে যেন হরণ করিয়া অন্তরময় মহাবিষ ঢালিয়া দিল। সিংহ-গর্জ্জনে তিনি গর্জ্জিয়া উঠিলেন, “কি, আমি বাঁচিয়া থাকিতে দামেস্কের সৌভাগ্য-শশী চিররাহুগ্রস্ত হইবে? একথা তুমি আজ কোথায় পাইলে? কে তোমার কর্ণে এ মূলমন্ত্র দিয়াছে? মারওয়ান! বুঝিলাম, হানিফার তরবারির তেজের কথা শুনিয়া তোমারও হৃৎপিণ্ডের শোণিতধার