পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৪৯
উদ্ধার পর্ব্ব—ঊনবিংশ প্রবাহ

হইয়া হানিফার বিজয়-ঘােষণা করিতে করিতে যাত্রা করিল। ধানুকী, পদাতিক ও পতাকাধারিগণ আনন্দরবে অগ্রে অগ্রে চলিল।

 সাতবার হজরতের পবিত্র রওজা ঘুরিয়া সমস্বরে ঈশ্বরের নাম উচ্চারণ করিয়া সকলে জয়নাল-উদ্ধারে যাত্রা করিলেন। মদিনাবাসীরাও অস্ত্রেশস্ত্রে সুসজ্জিত হইয়া মহানন্দে হানিফার জয়ঘােষণা করিতে করিতে সৈন্যদলে মিশিলেন। মারণ ভিন্ন মরণ-কথা কাহারও মনে নাই। সিংহদ্বার পার হইয়া তাহারা একস্বরে ঈশ্বরের নাম সপ্ত বার উচ্চারণ করিয়া যাইতে লাগিলেন। পথ প্রদর্শক উষ্ট্রারোহী মধুরস্বরে বংশীবাদন করিতে করিতে অগ্রে অগ্রে চলিল।

 দিবাভাগে গমন—রাত্রে বিশ্রাম। এই ভাবে কয়েক দিন যাইতে যাইতে একদিন পথ-প্রদর্শকদল সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করিবার জন্য ভেরী বাজাইতে লাগিল। সকলেই সমুৎসুক হইয়া সম্মুখে স্থিরনেত্রে দৃষ্টি নিক্ষেপ করিতেই দেখিলেন যে, বহু দূরে শিবিরের উচ্চ চূড়ায় লােহিত নিশান উড়িতেছে। গাজী রহ্‌মান সাঙ্কেতিক নিশান উড়াইয়া সকলকে গমনে ক্ষান্ত করিলেন। সকলেই মহাব্যস্ত! তত্ত্বানুসন্ধানে তাঁহারা জানিলেন যে, সম্মুখে সম-নিশান উড়িতেছে, সবিশেষ না জানিয়া আর অগ্রসর হওয়া উচিত নহে।

 মারওয়ান-শিবিরেও মারওয়ান ভেরীবাদনধ্বনি শুনিল। শিবিরের বাহিরে আসিয়া সে যাহা দেখিল, তাহাতে তাহার মুখে অন্য কোন কথা সরিল না। অস্থির ও আতঙ্কিতভাবে সে অলীদকে জিজ্ঞাসা করিল, “ভ্রাতঃ! আবার যে পূর্ব্বগগনে কি দেখা যায়? ঐ কি আগমন?”

 “কার আগমন?”

 “আর কার? যার ভয়ে অলীদ কম্পমান—মারওয়ান অস্থির।”

 অলীদ বিশেষ লক্ষ্য করিয়া দেখিয়া বলিল, “আর সন্দেহ নাই—এক্ষণে কি করা যায়?”

 “আর কি করা যায়? কিছু দিন বিশ্রাম করিব আশা ছিল—ঘটিল না। আর ক্ষণকাল তিষ্ঠিলেই তােমার আমার দশা মিলিয়া মিশিয়া, বােধ হয়, একই হইবে। হয়ত কিছু বেশীও হইতে পারে। পূর্ব্বসঙ্কল্প ঠিক রাখিয়া, যত শীঘ্র হইতে পারে যাইয়া নগর রক্ষার উপায় করা কর্ত্তব্য। যদি