পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৩৫৪

বসিতে পারি কি না? দেখি আমার হস্তে হানিফা বন্দী হয় কি না? দেখি এই তরবারিতেও মস্‌হাব কাক্কার শির ধরায় গড়াগড়ি যায় কি না? যাও; তোমার পত্র তুমি ফিরাইয়া লইয়া যাও,—যাহা বলিবার বলিলাম—মুখে বলিও”

 এজিদ ক্রোধে অধীর হইয়া মারওয়ানের পত্র দূরে নিক্ষেপ করিলেন। কাসেদ পত্র লইয়া ভয়ে কাঁপিতে কাঁপিতে চলিয়া গেল।

 এজিদ বিশ্রাম-গৃহ হইতে বহির্গত হইয়া আদেশ করিলেন, “যত সৈন্য এক্ষণে নগরে উপস্থিত আছে, সমুদয় প্রস্তুত হও—সামান্য প্রহরীমাত্র রাজপুরী রক্ষা করিবে, সৈন্য নামে নগরমধ্যে কেহই থাকিতে পারিবে না, সকলকে আমার সঙ্গে মদিনা আক্রমণে যাইতে হইবে;—হানিফার বধসাধনে যাইতে হইবে, মস্‌হাব কাক্কার মস্তক চূর্ণ করিতে যাইতে হইবে—সীমারের দাদ উদ্ধার করিতে যাইতে হইবে। বাজাও ডঙ্কা, বাজাও ভেরী, আন অশ্ব, আন উষ্ট্র, এখনই যাত্রা করিব।”

 অমাত্যগণ যাঁহারা তথায় উপস্থিত ছিলেন, তাঁহারা যুদ্ধে বিরত থাকিতে অনেক কথা বলিলেন, কিন্তু কাহারও কথাই এজিদের নিকট স্থান পাইল না, তাঁহার কর্ণে ভাল লাগিল না। পরিশেষে বৃদ্ধ হামান বলিতে লাগিলেন,— এত দিন পরে বৃদ্ধ সচিব নিতান্ত বাধ্য হইয়া স্থিরভাবে বলিতে লাগিলেন:

 “মহারাজ! আমি বৃদ্ধ হইয়াছি, বয়স-দোষে আমার বুদ্ধিভ্রম জন্মিয়াছে, বিবেচনার দোষ ঘটিয়াছে—ভবিষ্যৎ ফলাফলের চিন্তাতেও অপারগ হইয়াছি— ইহা আমি স্বীকার করি। কিন্তু মহারাজ! এই বৃদ্ধ আপনার পিতার চিরহিতৈষী, আপনার হিতৈষী, দামেস্ক-রাজ্যের হিতৈষী। এই দামেস্ক রাজ্য পূর্ব্বে যাহার করতলগত ছিল, ন্যায়ের অনুরোধে উচিত কথা বলিতে এই বৃদ্ধ কখনই তাঁহার নিকট সঙ্কুচিত হয় নাই। তাহার পর আপনার পিতার রাজত্বকালেও এই বৃদ্ধ সর্ব্বপ্রধান মন্ত্রীর আসন প্রাপ্ত হইয়াও ন্যায্য কথা বলিতে কখনই ত্রুটি করে নাই,—ভীত হয় নাই; মহারাজের রাজত্বসময়েও কর্ত্তব্যকার্য্যে পশ্চাৎপদ হয় নাই। কিন্তু মহারাজ! সে কাল আর এ কাল