পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৩৬৪

দেখিল, ইসলাম-শোণিতে দামেস্কের প্রান্তর প্রথমে রঞ্জিত হইল—এজিদের মন মহাহর্ষে নাচিয়া উঠিল।

 বল্লকীয়া উচ্চৈঃস্বরে বলিতে লাগিল, “আয়, কে যুদ্ধ করিবি, আয়! শুনিয়াছি, আম্বাজীরা বিখ্যাত বীর, আয় দেখি! বীরের তরবারির নিকটে কোন মহাবীর আসিবি আয়!”

 আহ্বানের পূর্ব্বেই দ্বিতীয় আম্বাজী বল্লকীয়ার সহিত যুদ্ধ করিতে উপস্থিত হইলেন। কিন্তু তাঁহাকে অধিকক্ষণ যুদ্ধে ব্যাপৃত থাকিতে হইল না। উষ্ণীষের সহিত দ্বিতীয় আম্বাজী-শির ভূমিতে গড়াইয়া পড়িল। ক্রমে সপ্তজন আম্বাজী বল্লকীয়া-হস্তে শহীদ হইলেন।

 এজিদ হর্ষোৎফুল্ল বদনে বলিতে লাগিলেন, “মারওয়ান! আজ কি দেখিতেছ? এই সকল সৈন্যই ত তোমাদিগকে পরাস্ত করিয়াছে, শৃগালকুক্কুরের ন্যায় তাড়াইয়া আনিয়াছে। তাহারাই ত ইহারা?”

 “মহারাজ। ইহার কারণ কিছুতেই বুঝিতে পারিতেছি না। আমাদের একটি সৈন্যহস্তে মোহাম্মদীয় সাত জন সৈন্য কোনও যুদ্ধক্ষেত্রেই যমপুরী দর্শন করে নাই। সকলই মহারাজের অনুগ্রহে আর দামেস্ক-প্রস্তরের পবিত্রতার গুণে সম্ভব হইল।

 এজিদ-পক্ষে উৎসাহসূচক বাজনার দ্বিগুণ রোল উঠিয়াছে। বল্লকীয়ার সম্মুখে কেহই টিঁকিতেছে না! হানিফার সৈন্যশোণিতেই রণপ্রাঙ্গণ রঞ্জিত হইতেছে! এজিদ মহা সুখী!

 গাজী রহ্‌মান মোহাম্মদ হানিফাকে বলিলেন, “বাদশাহ্-নামদার। এ প্রকারে যোদ্ধাগণকে শত্রু সম্মুখে পাঠান আর উচিত হইতেছে না। বুঝিলাম, দামেস্ক-রাজ্যের সৈন্যবল একেবারে সামান্য নহে।”

 মস্‌হাব কাক্কা, ওমর আলী প্রভৃতি বল্লকীয়ার যুদ্ধ বিশেষ মনোযোগে দেখিতেছিলেন। এক বল্লকীয়া এতগুলি সৈন্য বিনাশ করিল দেখিয়া তাঁহারা সকলেই যুদ্ধে গমন করিতে প্রস্তুত হইলেন।

 মোহাম্মদ হানিফা বলিলেন, “ভ্রাতৃগণ! আর সহ্য হইতেছে না, সমুদয় শরীরে আগুন জ্বালিয়া দিয়াছে। আর শিবিরে থাকিতে পারিলাম