পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৩৭৮

হইয়ছিলেন। সেই সকল প্রাচীন কাহিনী, প্রচীন কথা, কেবল সেই অদ্বিতীয় ভগবানের মহাশক্তির প্রত্যক্ষ প্রমাণ দেখাইয়া দিতেছে। তিনি কি না করিতে পারেন? আজ ওমর আলীর প্রাণবধ হইবে, কাল এজিদের প্রাণ যাইতে পারে। ঈশ্বর যাহা ঘটাইবেন, তাহা নিবারণের কাহারও ক্ষমতা নাই। তিনি সর্ব্বপ্রকারে দয়াময়—সকল অবস্থাতেই করুণাময়! ভাবিলে কি হইবে?—আর কাঁদিলেই বা কি হইবে?”

 “আপনার হিতোপদেশে আমার মন অনেক সুস্থ হইল। কিন্তু একটি কথা এই যে, প্রধান বীর ওমর আলী এজিদহস্তে মারা পড়িল, ইহাতে হানিফার সাহস, বল, উৎসাহ অনেক লাঘব হইল।”

 “সে কি কথা? সেই অদ্বিতীয় ভগবান হানিফাকেও এজিদহস্তে বিনাশ করাইয়া আমাদিগকে উদ্ধার করিতে পারেন। তাঁহার নিকটে এ কার্য্য আশ্চর্য্য নহে। তিনি কি না করিতে পারেন? পর্ব্বতকে সমুদ্রে পরিণত করিতে, মহানগরকে বনে পরিণত করিতে, মহাসমুদ্রে মহানগর বসাইতে তাঁহার কতক্ষণের কাজ? তাঁহার ক্ষমতার—দয়ার অন্ত নাই। তবে জগৎ চক্ষে সাধারণ বিবেচনায় দেখিতে হইবে যে, এ সকল ঘটনার মূল কি? আমার মনের কথা আমি বলিতেছি—ইহা আর কিছুই নহে:—ঈশ্বরের লীলা-প্রকাশ—ক্ষমত-বিকাশ! কিন্তু সেই ঈশ্বরই সেই ক্ষমতা বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে তাঁহার সৃষ্ট জীবকে উপদেশ দিতেছেন,—“জীব! সাবধান! এই কার্য্যে এই ফল, এই পথে চলিলে এই দুর্গতি, আমার নির্দ্ধারিত নিয়মের ব্যতিক্রম করিলে—এই শাস্তি। তিনি সকলকেই সমান ক্ষমতা দিয়াছেন, কাহাকেও কোন কার্য্য করিতে নিবারণ করেন না। আপন ভালমন্দ আপনিই বুঝিয়া লইতে হইবে। সংসার বড় ভয়ানক কঠিন স্থান! আজ আমরা দামেস্কে বন্দীখানায় বন্দীভাবে বসিয়া এত কথা বলিতেছি।—ভাব দেখি, ইহার মূল কি?”

 এইরূপ কথা হইতেছে, এমন সময়ে জয়নাব আসিয়া বলিলেন,—“আমি গবাক্ষদ্বারে দণ্ডায়মান হইয়া দেখিলাম: নগরের বহুসংখ্যক লোক দামেস্ক-প্রান্তরে যাইতেছে। সকলের মুখে একই কথা—‘আজ ওমর