পঞ্চবিংশ প্রবাহ
মানবের ভাগ্যবিমানে দুঃখময়-কালমেঘ দেখা দিলে, সে দিকে কাহারও দৃষ্টি পড়ে না, ভ্রমেও কেহ ফিরিয়া দেখে না। ভাল মুখে দু’টি ভাল কথা বলিয়া তাহার তাপিত প্রাণ শীতল করা দুরে থাকুক, মুখ ফুটিয়া কথা বলিতেও আমাদের ঘৃণা জন্মে, সে দিকে চক্ষু তুলিয়া চাহিতেও অপমান জ্ঞান হয়। সে উপযাচক হইয়া মিশিতে আসিলেও নানা কৌশলে তাহাকে তাড়াইতে ইচ্ছা করে। আত্মীয়-স্বজন-পরিজন-জ্ঞাতি-কুটুম্বের চক্ষেও দুর্ভাগার আকৃতি চক্ষুশূল-বোধ হয়। এক প্রাণ, এক আত্মা, হৃদয়ের বন্ধুও সে সময় সহজ দোষ দেখাইয়া ক্রমে সরিতে থাকেন। দুঃখের সময় জীবন কাহার না ভালবোধ হয়? শনিগ্রস্ত জীবের কোথায় না অনাদর! রাহুগ্রস্ত বিধুর কতই না অপবাদ! ভবের ভাব বড়ই চমৎকার! কালে আবার সেই আকাশে,—সেই মানবের ভাগ্যাকাশে, মৃদু মৃদু ভাবে সুবাতাস বহিয়া, কালমেঘগুলি ক্রমে সরাইয়া, সৌভাগ্য-শশীর পুনরুদয় দেখাইয়া দিলে আর কথাটি নাই! তখন কত হৃদয় হইতে প্রেম, প্রণয়, ভালবাসা, আদর, স্নেহ, যত্ন এবং মায়ার স্রোত, প্রবাহ-ধার,যাহা বল, ছুটিতে থাকে—বহিতে থাকে। —কত মনে দয়ার সঞ্চার, মিলনের বাসনা এবং ভক্তির উদয় হইতে থাকে। —কত চক্ষুষ্মানের বঙ্কিমে দেখিতে ইচ্ছা করে!—শতমুখে সুযশ, সুখ্যাতি গাহিতে ইচ্ছা করে, শতমুখে সুকীর্ত্তির গুণ বর্ণনা হইতে থাকে। তখন আর যাচিয়া প্রেম বাড়াইতে হয় না, ডাকিয়াও কাছে কাহাকেও বসাইতে হয় না। পরিচয় না থাকিলেও পরিচয়ের পরিচয় দিয়া লোকে দাবিয়া, চাপিয়া বসিয়া থাকে। আজ এজিদের ভাগ্য-বিমান হইতে কালমেঘ সরিয়া সৌভাগ্যশশীর উদয় হইয়াছে—ওমর আলী বন্দী! শত শত ঘোষণা করিয়া দ্বিগুণ বেতনের আশা দেখাইয়াও এজিদ আশার অনুরূপ সৈন্যসংগ্রহ করিতে সমর্থ হন নাই। আজ অমর আলী বন্দী; তাঁহার শূলদণ্ডে প্রাণবধ—এই ঘোষণা শুনিয়া লোকে দলে দলে সৈন্যদলে নাম লিখাইতেছে, স্বার্থের আশায়,