পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৩৮৮

 “কেন? শূলে চড়িয়া প্রাণ দিতে কি লজ্জাবোধ হইতেছে। হায় য়ে লজ্জা! এমন অমূল্য জীবনই যদি গেল, তবে সে লজ্জায় ফল কি?”

 “আমি তোমার কথা শুনিতে ইচ্ছা করি না। তোমার কার্য্য তুমি কর, আমি আর এক পদও অগ্রসর হইব না।”

 “মুহূর্ত্ত পরে যাহার জীবন-কাণ্ডের শেষ অভিনয় হইয়া জীবনের মত যবনিকা পতন হইবে, তাহার আবার স্পর্ধা?”

 “দেখ্ মারওয়ান! সাবধান হইয়া কথা বলিস্। আমার হস্ত কঠিন বন্ধনে বাঁধা আছে, নতুবা তোর মুখের শাস্তি দিতে ওমর আলীকে বেশী দূর যাইতে হইত না।”

 মারওয়ান মহাক্রোধে ওমর আলীকে পশ্চাদ্দিক হইতে সরোষে ধাক্কা দিয়া বলিল, “চল্, তোকে পায়ে হাঁটাইয়া লইয়া শূলে চড়াইব।”

 ওমর আলী নীরব। মারওয়ান অনেক চেষ্টা করিল, তিল পরিমাণ স্থানও ওমর আলীকে সরাইতে পারিল না;—লজ্জিত হইয়া বলিল, “সকলে একত্রে একযোগ হইয়া তোকে শূন্যে তুলিয়া লইয়া যাইব।”

 ওমর আলী হাস্য করিয়া বলিলেন, “মারওয়ান, তুমি ত পারিলে না! সকলে একত্র হইয়া আমাকে শূলদণ্ডের নিকট লইয়া যাইবে, ইহাতে তোমার গৌরব কি? তুমি সুখী হও কোন্ মুখে?”

 “আমি সুখী হই বা না হই, তোকে শূলে চড়াইবই।”

 “এখান হইতে লইয়া যাইতে পারিলে ত শূল?”

 মারওয়ান প্রহরিগণকে বলিল, “তোমরা অস্ত্রশস্ত্র রাখিয়া সকলে ইহাকে ধরিয়া, শূন্যে লইয়া আমার সঙ্গে আইস।”

 প্রহরিগণ প্রভু-আজ্ঞা প্রতিপালন করিল বটে, কিন্তু ওমর আলী সেইরূপ পাষণ—পাষাণবৎ অচল। যিনি যে পদ যেখানে রাখিয়াছিলেন, সেই পদ সেইখানেই রহিয়া গেল! প্রহরিগণ লজ্জিত—মারওয়ান রোষে অধীর।

 মারওয়ান পুনরায় মনে মনে বলিতে লাগিল, “মহাবিপদ! এখান হইতে বধ্যভূমি পর্যন্ত লইতেই এত কষ্ট, শূলের উপর চড়ান ত সহজ কথা নহে।”