তার আর কথা কি? এখনও মহারাজ এজিদ দয়া করিলেও করিতে পারেন!”
বাহ্রাম জিজ্ঞাসা করিল, “ওমর আলী! তোমার অন্তিমকাল উপস্থিত। কোন কথা বলিবার থাকে ত বল,—আর বিলম্ব নাই।”
ওমর আলী বলিলেন, “এতক্ষণ অনেক বলিয়াছি, আর কোন কথাই নাই। তবে ইচ্ছা যে, যাইবার সময় একবার ঈশ্বরের উপাসনা করিয়া যাই। কিন্তু আমার হস্তপদ কঠিনবন্ধনে বাঁধা আছে, ইহাতে সম্পূর্ণরূপে উপাসনা ব্যাঘাত হইতেছে। যদি তোমাদের সাহস হয়, তবে আমার হস্তের বন্ধন খুলিয়া দাও; আমি অন্তিম সময়ে একবার পরম কারুণিক পরমেশ্বরের যথার্থ নাম উচ্চারণ করিয়া আমার জাতীয় উপাসনায় অন্তরকে পরিতৃপ্ত করি।”
জেয়াদ বলিল, “ওমর! আমি তোমার বন্ধন খুলিয়া দিতেছি। তুমি স্বচ্ছন্দে তোমার ইষ্টদেবতার নাম কর, ঈশ্বরকে যথাবিধি আরাধনা কর। মৃত্যুকালে ঈশ্বরের নাম করিতে আমি কখনই বাধা দিব না। ঈশ্বর তোমাকে যে, কখনও রক্ষা করিতে পারেন,—এ ভ্রমও তুমি পরীক্ষা কর। আমি তোমাকে তোমার ইষ্টদেবতার শপথ দিয়া বলিতেছি, তোমার উদ্ধারের জন্য তুমি কায়মনে তোমার নিরাকার নির্ব্বিকার দয়াল প্রভুর নিকট আরাধনা কর।” এই বলিয়া জেয়াদ স্বহস্তে ওমর আলীর বন্ধন মোচন করিয়া দিল।
ওমর আলী মৃত্তিকা দ্বারা[১] “অজু” ক্রিয়া সমাপন করিয়া, যথারীতি ঈশ্বরের উপাসনা করিলেন। উপাসনার পর দুই হস্ত তুলিয়া তিনি প্রভু গুণানুবাদ করিতে করিতে শূলদণ্ডের চতুর্দ্দিকে চাহিয়া দেখিলেন এবং বীরত্বের সহিত ঈশ্বরের নাম উচ্চারণ করিয়া দণ্ডায়মান হইলেন। ওমর আলীর সঙ্গে সঙ্গে বাহ্রাম বলিয়া উঠিলেন, “জেয়াদ! বিশ্বাসঘাতকতার ফল গ্রহণ কর। মোস্লেম-হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণ কর। ওমর আলীকে উদ্ধার করিতে আসিয়া তোমাকে সুযোগমত পাইয়াছি—ছাড়িব না।” এই বলিয়া সজোর আঘাতে জেয়াদ-শির দেহবিচ্ছিন্ন করিলেন। সেই শিরসংযুক্ত কেশগুচ্ছে ধরিয়া, শিরহস্তে বাহ্রাম বলিতে লাগিলেন, “রে বিধর্ম্মী এজিদ! দেখ্, কি
- ↑ জলাভাবে মৃত্তিকা দ্বারাও শরীর পবিত্র করিবার বিধি আছে, তাহার নাম তৈয়ন্মুম