সহিত কি আবার রণভেরী বাজিয়া উঠিবে? কার ভাগ্যে কি আছে, কে বলিবে? আবার তারাদলে তাহার নয়ন পড়িল,—সেই মধুমাখা মিটি মিটি হাসিহাসি ভাব,—এ তারা, ও তারা, কত তারা দেখিল, কিন্তু অরুন্ধতী নক্ষত্র তাহার নয়নে পড়িল না। তারাদল হইতে নয়ন ফিরাইয়া আনিতেই হানিফার শিবিরে প্রদীপ্ত দীপালোকের প্রতি তাহার চক্ষু পড়িল। অলীদ সে দিকে মনঃসংযোগ না করিয়া অন্য দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করিয়াই তীর-ধনু হস্তে লইল। ছদ্মবেশী মারওয়ান কথা না কহিলে, অলীদ-বাণে তখনই তাহার জীবন শেষ হইত।
অলীদ বলিল, “নিশীথ-সময়ে এ বেশে কোথায়? ভাগ্যে কথা বলিয়াছিলেন!”
“তাহাতেও দুঃখ ছিল না। যে গতিক দেখিতেছি, তাহাতে দুই এক দিনের অগ্রপশ্চাৎ মাত্র। ভাল, তোমার চক্ষেও যে আজ নিদ্র নাই?”
“আপনার চক্ষেই বা আছে কি?”
“অনেক চেষ্টা করিলাম, কিছুতেই নিদ্রা হইল না। মনে শান্তি নাই, আত্মার পরিতোষ কিসে হইবে? নানা প্রকার চিন্তায় মন মহা আকুল হইয়া পড়িয়াছে। দেখ দেখি, কি ভ্রম! কি করিতে গিয়া কি ঘটিল! জেয়াদের মৃত্যু জেয়াদ নিজ বুদ্ধিতেই টানিয়া আনিয়াছিল। এমন আশ্চর্য্য ঘটনা, অভাবনীয় বুদ্ধিকৌশল, হাতে হাতে চাতুরী কখনই দেখি নাই, আজ পর্য্যন্ত কাহারও মুখে শুনি নাই। ধন্য মোহাম্মদ হানিফা। ধন্য গাজী রহ্মান।”
“গত বিষয়ের চিন্তা বৃথা,—আলোচনাতে কেবল আক্ষেপ ও মনের কষ্ট। ও কথা মনে করিবার আর প্রয়োজন নাই। এখন রাত্রি প্রভাতের পর উপায় কি? যুদ্ধ আর ক্ষান্ত থাকে না,—সে যুদ্ধই বা কাহার জন্য, মূলধন ত সরিয়া পড়িয়াছে।”
“সেও কম আশ্চর্য্য নহে।”
“সময় মন্দ হইলে এই প্রকারই হইয়া থাকে।
“যাহা হইবার হইয়াছে, এখন চল, একবার হানিফার শিবিরের দিকে যাইয়া দেখিয়া আসি, কোন সুযোগে জয়নালের কোন সন্ধান লইতে পারি