পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৪০৬

প্রভাত হইতে না হইতেই তাহারা ফিরিয়া আসিবে,—এই কথা পথে স্থির হইল। কিঞ্চিৎ দূরে আসিয়া মারওয়ান বলিল, “একেবারে সোজা পথে যাইব না। শিবিরের পশ্চাৎ ভাগ সম্মুখে রাখিয়া যাইতে হইবে। এখন আমরা বাম পার্শ্ব হইয়া ক্রমে শত্রু-শিবির বেষ্টন করিয়া যাইতে থাকিব।”

 এই যুক্তিই স্থির করিয়া তাহারা ক্রমে বাম দিকেই যাইতে লাগিল। ক্রমে হানিফার শিবিরের পশ্চাৎ দিক তাহাদের চক্ষে পড়িতে লাগিল। সম্মুখে যেরূপ আলোর পারিপাট্য, সেইরূপ পশ্চাৎ, পার্শ্ব—সকল দিকেই সমান। সম্মুখে, পার্শ্বে, পশ্চাতে কিছুই ভেদ নাই। কখনও দ্রুতপদে, কখনও মন্দ মন্দ ভাবে, চতুর্দ্দিক লক্ষ্য করিয়া যথাসাধ্য সতর্কে তাহারা যাইতে লাগিল। কিছুদূর গিয়া তাহারা নিশ্চয় বুঝিতে পারিল যে, তাহাদের সঙ্গে আরও লোক আসিতেছে। আরও কিছুদূর অগ্রসর হইল, হাসি-রহস্য-বিদ্রূপসূচক কোন কোন কথার আভাস তাহাদের কানে আসিতে লাগিল। কোন্ দিক এবং কত দূর হইতে এই কথার আভাষ আসিতেছে, তাহারা তাহা স্থির করিতে পারিল না। কারণ, কখনও দক্ষিণে, কখনও বামে, কখনও সম্মুখে, আবার কখনও পশ্চাতে— অতি মৃদু মৃদু কথায় আভাষ তাহাদের কানে আসিতে লাগিল। উভয়ে গমনে ক্ষান্ত দিয়া মনঃসংযোগে বিশেষ লক্ষ্যে চারিদিকে দেখিতে লাগিল।—দেখিল, কোন দিকে কিছুই নাই, চারিদিক অন্ধকার, উপরে তারকারাজি।

 উভয়ে আবার যাইতে লাগিল। প্রায় দশ-পদ ভূমি অতিক্রম করিয়া যাইতেই, মানব-মুখোচ্চারিত অসংযুক্ত কথার ঈষৎ ভাব স্পষ্ট শুনিতে পাইল। সে কথার প্রতি গ্রাহ্য না করিয়া তাহারা যাইতে লাগিল, কিন্তু আর বেশী দূর যাইতে হইল না। আনুমানিক পঞ্চ হস্ত পরিমাণ ভূমি পশ্চাতে রাখিয়া অগ্রসর হইতেই তাহাদের বামপার্শ্ব হইতেই শব্দ হইল—“আর নয়, অনেক দূর আসিয়াছ।”

 মারওয়ান চম্‌কাইয়া উঠিল। আবার শব্দ হইল,—“কি অভিসন্ধি?”

 মারওয়ান ও অলীদ উভয়েই চম্‌কাইয়া উঠিল, তাহাদের অঙ্গ শিহরিয়া উঠিল—স্থির ভাবে তাহারা দাঁড়াইয়া রহিল।

 আবার শব্দ হইল—“নিশীথ সময়ে রাজ-শিবিরের দিকে কেন?