পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪০৭
উদ্ধার পর্ব্ব—সপ্তবিংশ প্রবাহ

সাধান! আর অগ্রসর হইও না। যদি আর যাইতে আশা থাকে, তবে সূর্য্য উদয়ের পর—”

 মারওয়ান ও অলীদ উভয়ে ফিরিল, আর সে পথের দিকে ফিরিয়াও চাহিল না। কিছু দূরে আসিয়া অন্য পথে অন্য দিকে শিবিরের দিকে লক্ষ্য করিয়া চলিতে লাগিল। মারওয়ান বলিল, “অলীদ আমারই ভুল হইয়াছে, এদিকে না আসিয়া অন্য দিকে যাওয়াই ভাল ছিল।”

 “অন্য কোন্ দিকে যাওয়া ভাল ছিল বলুন, সেই দিকেই যাই। ভুল সংশোধন করিতে কতক্ষণ লাগে? যে দিক আপনি নিরাপদ বোধ করেন, সেই দিকেই চলুন।”

 মারওয়ান শিবিরের দক্ষিণ পার্শ্বে যাইতে লাগিল, সেই দিকে যাইতে তাহার মনে কোন সন্দেহ হইল না। পশ্চাতে, সম্মুখে, কি বামে, কোন দিকেই আর শঙ্কাবোধ হইল না। নিঃশঙ্কচিত্তে তাহারা যাইতে লাগিল।

 অলীদ বলিল, “দেখিলে গাজী রহ্‌মানের বন্দোবস্ত দেখিলে?”

 এ দিকে কি?”

 “বোধ হয়, অন্য দিকের মত এদিকের তত গুরুত্ব মনে করে নাই।”

 “সে কি আর ভ্রম নয়?”

 “মারওয়ান! এখন ও-কথা মুখে আনিও না। গাজী রহ্‌মানের ভ্রম একথা মুখে আনিও না। কার্য্যসিদ্ধি করিয়া নির্ব্বিঘ্নে নিজ শিবিরে যাইয়া যাহা বলিবার বলিও। অন্য দিকে কি কৌশল করিয়াছে, তাহা তাহারাই জানে।”

 “তা জানুক, এ দিকে কোন বাধা নাই, নিঃসন্দেহে যাইতেছি; মনে কোনরূপ শঙ্কা হইতেছে না।”

 “আমি ভাই, আমার কথা বলি।—আমার মনে অনেক কথা উঠিয়াছে—ভয়েরও সঞ্চার হইয়াছে। আমি তোমার পশ্চাতে থাকিব না। দুই জনে একত্রে সমানভাবে যাই, কেহই কাহারও অগ্রপশ্চাৎ হইব না।”

 মারওয়ান হাসিয়া বলিল, “অলীদ, তুমি আজ মহাবীরের নাম ডুবাইলে। অল্পমতি বালকগণের মনের সহিত পরিপক্ক মনের সমান ভাব দেখাইলে।