পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
২৬

অঙ্গ বস্ত্রে আবৃত করিয়া যদি উপরিস্থ স্থানদ্বয় অনাবৃত রাখে, তাহা হইলেও তাহাকে উলঙ্গ জ্ঞান করিতে হয়। স্থূল কথা, মণিবদ্ধ হইতে পায়ের গুল্‌ফ পর্যন্ত এবং নির্দিষ্ট আব্‌রুহু-স্থান বস্ত্রাবৃত না থাকিলে জাতীয় ধর্ম্মানুসারে তাহাকে উলঙ্গ জ্ঞান করিতে হয়। এই প্রকারে বস্ত্রের ব্যবহার করিতে না পারা সত্ত্বেই আমাদের দেশে “জানানা”-রীতি প্রচলিত হইয়াছে। আবার কোন কোন দেশে শাস্ত্রের মর্য্যাদা রক্ষা ও স্ত্রী-স্বাধীনতায় বাধা দেওয়া অনুচিত বিবেচনায় “বোর্‌কা” অর্থাৎ শরীরাবরণ-বসনের সৃষ্টি হইয়াছে। উক্ত প্রদেশ গুলিতে সচরাচর প্রকাশ্য স্থানে বাহির হইতে হইলে বোর্‌কা ব্যবহৃত হইয়া থাকে।) জয়নাব শাস্ত্রসঙ্গত বৈধব্য অবস্থায় শুভ্রবেশ পরিধান করিয়া ঈশ্বরের উপাসনায় দিবস-যামিনী যাপন করিতেছেন; হস্তে তস্‌বীহ্‌ (জপমালা); সংসারের সমুদয় কার্য্য পরিত্যাগ করিয়া অদৃষ্টের লিখন অখণ্ডনীয় বিবেচনাতেই আন্তরিক দুঃখ সহ্য করিয়া কেবলমাত্র ঈশ্বরের প্রতিই নির্ভর করিয়া আছেন। এত মলিনভাব, অথচ তাঁহার স্বাভাবিক সৌন্দর্য্য ও রূপমাধুর্য্যে মানুষমাত্রেই বিমোহিত!

 মোস্‌লেম যথাসময়ে জয়নাবের ভবনে উপস্থিত হইলেন। স্বাধীন দেশ, স্বাধীন প্রকৃতি, নিজের ভালমন্দ নিজের প্রতিই নির্ভর করে। বিশেষতঃ, পূর্ণবয়স্ক হইলে বিবাহ-বিষয়টি স্বেচ্ছাধীন হইয়া থাকে, নিজের বিবেচনার প্রতি সমস্তই নির্ভর করে। জয়নাব পিতার বর্ত্তমানে ও দেশীয় প্রধানুসারে এবং শাস্ত্রসঙ্গত স্বাধীনভাবেই মোস্‌লেমের সহিত কথা কহিতে লাগিলেন; তাঁহার পিতা অদূরে দণ্ডায়মান থাকিয়া উভয়ের কথোপকথন শ্রবণ করিতে লাগিলেন।

 মোস্‌লেম বলিলেন, “ঈশ্বরের প্রসাদে পথশ্রম দূর হইয়াছে। সতি! যে উদ্দেশ্যে আমি দৌত্য-কর্ম্মে নিযুক্ত হইয়া আসিয়াছি, একে একে নিবেদন করি, শ্রবণ করুন। যদিও আপনার বৈধব্যব্রত আজ পর্য্যন্ত শেষ হয় নাই, কিন্তু প্রস্তাবে অধর্ম্ম নাই। আমাদের দামেস্কাধিপতি হজরত মাবিয়ার বিষয় আপনার অবিদিত কিছুই নাই। তাঁহার রাজ্য-ঐশ্বর্য্য সকলই আপনি জ্ঞাত আছেন। সেই দামেস্কাধিপতির একমাত্র পুত্র এজিদের বিবাহ-পয়গাম