পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৪১০

আর কোন গোলযোগ নাই। ক্ষণকাল এই স্থানে বসিয়া মনের অস্থিরতা দূর করি। যেমন কার্য্যে আসিয়াছিলাম, তাহার প্রতিফলও পাইলাম।”

 অলীদ মারওয়ানের কথায় কোন আপত্তি না করিয়া শিলাখণ্ডের চতুষ্পার্শ্ব একবার বেষ্টন করিয়া আসিল এবং নিঃশঙ্কচিত্তে উভয়ে বসিয়া অস্ফুটস্বরে কথা কহিতে লাগিল।

 এক কথার ইতি হইতে না হইতেই অন্য কথা তুলিলে কথার বাঁধুনী থাকে না; সমাজ-বিশেষে অসভ্যতাও প্রকাশ পায়। জয়নাল আবেদীন বন্দীগৃহ হইতে চলিয়া যাওয়ার পর এমন সুযোগ পাই নাই যে, তাহার বিবরণ পাঠকগণের গোচর করি। মারওয়ান এবং ওত্‌বে অলীদ শিলাখণ্ডের উপরে বসিয়া নির্ব্বিঘ্নে মনের কথা ভাঙ্গচুর করুক, এই অবসরে আমরা জয়নালের কথাটা বলিয়া রাখি।

 জয়নাল আবেদীন ওমর আলীর শূলদণ্ডের ঘোষণা শুনিয়া বন্দীগৃহের সম্মুখস্থ প্রাঙ্গণ হইতে প্রহরীদের অসাবধানতায় নাগরিক দলে মিশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে আসিয়াছিলেন। তিনি স্বীয় নামেই সকলের কাছে পরিচিত; কিন্তু অনেকেই তাঁহাকে চক্ষে দেখে নাই। মোহাম্মদ হানিফাকে তিনি কখনও দেখেন নাই, ওমর আলীকেও দেখেন নাই—অথচ ওমর আলীর প্রাণরক্ষার জন্য চেষ্টা করিবেন, এই দুরাশার কুহকে মাতিয়াই তিনি দামেস্ক-প্রান্তরে আসিয়াছিলেন। এজিদের শিবির, হানিফার শিবির, ওমর আলীর নিষ্কৃতি,সমুদয়ই তিনি দেখিয়াছেন, তাঁহার নিজের প্রাণবধের ঘোষণাও স্বকর্ণে শুনিয়াছেন। ঐ ঘোষণার পর তিলার্দ্ধকালও দামেস্ক-প্রান্তরে তিনি অবস্থিতি করেন নাই; নিকট এক পর্ব্বত-গুহায় আত্মগোপন করিয়া, দিবা অতিবাহিত করিয়াছেন। নিশীথ সময়ে পর্ব্বত-গুহা হইতে বহির্গত হইয়া তাঁহার প্রথম চিন্তা—কি উপায়ে মোহাম্মদ হানিফার সহিত একত্রিত হইবেন।—সে শিবিরে তাঁহার পরিচিত লোক কেহই নাই —নিজ মুখে নিজ পরিচয় দিয়া দাঁড়াইতেও নিতান্ত অনিচ্ছা! ভাবিয়া কিছুই স্থির করিতে না পারিয়া, তিনি দুই এক পদ করিয়া হানিফার শিবিভিমুখেই যাইতেছেন।

 অলীদ বলিল, “মারওয়ান! কিছু শুনিতে পাইতেছ?”