পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৪১২

 ভীমনা শিলারাশির পার্শ্ব হইতে আম্বাজী গুপ্ত সৈন্যদের শব্দ হইল: ওরে ছদ্মবেশী নিশাচর। মদিনাবাসীরা দামেস্কে চাকরীর আশায় আসিয়াছে? আর কোথায় যাইবি? এই স্থানে নিশা যাপন কর। প্রভাতে পরীক্ষার পর মুক্তি। এক পদও আর অগ্রসর হইতে পারিবি না। যদি চক্ষের জ্যোতিঃ থাকে, দৃষ্টির ক্ষমতা থাকে, তবে যে দিকে ইচ্ছা চাহিয়া দেখ, পঞ্চবিংশতি বর্ষার ফলক তোমাদের বক্ষ, পৃষ্ঠ, বাহু ও পা লক্ষ্য করিয়া স্থিরভাবে রহিয়াছে। সাবধান! কোন কথা উত্থাপন করিও না,—নীরবে তিন মূর্ত্তি প্রভাত পর্য্যন্ত এই স্থানে দণ্ডায়মান থাক। আর যাইবার সাধ্য নাই। মোহাম্মদ হানিফার গুপ্ত সৈন্য দ্বারা তোমরা তিন জন সূর্য্যোদয় পর্য্যন্ত বন্দী।”

অষ্টাবিংশ প্রবাহ

 রাজার দক্ষিণ হস্ত—মন্ত্রী, বুদ্ধি—মন্ত্রী, বল—মন্ত্রী। মন্ত্রীপ্রবর গাজী রহ্‌মানের চক্ষেও আজ নিদ্রা নাই, একথা সপ্তবিংশতি প্রবাহের প্রারম্ভেই প্রকাশ করা হইয়াছে। গাজী রহ্‌মান এক্ষণে মহাব্যস্ত। নিশা প্রায় শেষ হইয়া আসিল, গুপ্তচরেরা এ পর্য্যন্ত ফিরিয়া আসে নাই। আজিকার সংবাদ, দামেস্ক নগরের সংবাদ—এজিদ-শিবিরের নূতন সংবাদ, এ পর্য্যন্ত কোনও সংবাদই তিনি প্রাপ্ত হইতে পারেন নাই: দ্বিতীয় দিনে শিবির আক্রমণের উদ্যোগে এজিদ জয়নাল আবেদীনের প্রাণবধ হইতে বিরত হইল,—ইহাতে কি কোন নিগূঢ় তত্ত্ব আছে? আজ হউক, কাল হউক, শিবির আক্রমণ হইবেই হইবে,—সে ভয়ে জয়নালের প্রাণধে ক্ষান্ত হইবে কেন?

 দূরদর্শী মন্ত্রী উপরোক্ত আলোচনায় চিন্তার বেগ বিস্তার করিয়াছেন। নগর, প্রান্তর, শিবির, বন্দীগৃহ, যুদ্ধক্ষেত্র, সৈনিকদল, শূলদণ্ড, এজিদ, মারওয়ান, সকলের বিষয় এক একবার আলোচনা করিতেছেন। আবার মনে উঠিল: জয়নাল-বধে ক্ষান্ত থাকিরে কেন? মারওয়ানের কূটবুদ্ধির সীমা বহুদূরব্যাপী। নিশাও প্রায় শেষ হইয়া আসিল, এখনও কেহ শিবিরে