পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪১৯
উদ্ধার পর্ব্ব—ঊনত্রিংশ প্রবাহ

বাক্য উপেক্ষা করিল?— কেন নিরপরাধ মোস্‌লেমকে হত্যা করিল?— কেন হাসানকে বিষপান করাইল? যে আমায় ভালবাসিল না, যে জয়নাব এজিদকে ভালবাসিল না,—এজিদ তাহার জন্য এত করিল কেন? স্ত্রী-হস্তে স্বামী বধ! মানিলাম, এজিদের মনে ইহকাল ও পরকালের আগুন জ্বালাইয়া হাসান জয়নাব লাভ করিয়াছিল। হাসান মরিয়া গেল, এজিদের মনের আগুন জ্বলিতে থাকিল। জ্বলুক, আরও পুড়ুক, জ্বলুক, শাস্তিভোগ করুক। কিন্তু হোসেন কি? সে নিরাশ্রয়কে আশ্রয় দিয়াছিল, যত্নে রাখিয়াছিল। ছিঃ ছিঃ! তাহারই জন্য সমর! ছিঃ! তাহারই জন্য কার বালায় রক্তপাত! তাহাতেই বা কি হইল? জয়নাব সেই প্রথম দর্শনেই এজিদকে যে চক্ষে দেখিয়াছিল, আজও সেই চক্ষেই দেখিয়া থাকে—লাভের মধ্যে বেশীর ভাগ—ঘৃণা। থাক্, ও কথা থাক্। হানিফার অপরাধ? আমি তাহার মাথা কাটিতে চাহি কেন? তওবা! তওবা!! আমি কেন তাহার প্রাণ লইতে চাই? আর একটি কথা বড় মূল্যবান, এজিদের বন্দীগৃহে জয়নাল আবেদীন নাই! থাকিবে কেন? সে সিংহশাবক শৃগালের কুটীরে থাকিবে কেন? সে বীরের পুত্র বীর, তীর না ছুঁড়িয়া সে থাকিবে কেন?”

 এমন সময় সেনাপতি ওমর আসিয়া করজোড়ে বলিলেন, “বাদশাহ্-নামদার। প্রহরিগণ বলিতেছে—নিশীথ সময়ে প্রধান মন্ত্রী মারওয়ান এবং সৈন্যাধ্যক্ষ ওত্‌বে অলীদ ছদ্মবেশে শিবির হইতে বহির্গত হইয়াছেন। রাত্রি প্রায় প্রভাত হইয়া আসিল, তাঁহারা এখনও শিবিরে আসিলেন না। সন্ধানী অনুচরেরাও কোন সন্ধান করিতে পারে নাই, বোধ হয়, তাঁহাদের কোন অমঙ্গল ঘটিয়া থাকিবে।”

 এজিদ প্রসন্নমুখে, জড়িত রসনায়, আরক্তিম লোচনে বলিলেন, “পরকে—উঃ—পরকে ঠকাইতে গিয়াছিলেন, নিজেই ঠকিয়াছেন। আপনিও ত সেনাপতি। বলুন ত, ছল-চাতুরী করিয়া কে কয় দিন বঁচিয়াছে? সেনাপতি মহাশয়! একথা নিশ্চিত যে, তেজশূন্য শরীর, বলশূন্য বাহু, সাহসশূন্য বক্ষ, বুদ্ধিশূন্য মজ্জা, ইহারাই সম্মুখ সমরে ভীত হইয়া ছদ্মবেশে