পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪২৩
উদ্ধার পর্ব্ব—ত্রিংশ প্রবাহ

জ্ঞাত আছি। আপনি অতি মহৎ। সেই মহৎ নাম যাহাতে রক্ষা পায়, তাহার মত কার্য্য করিবেন?”

 “বলুন! আমি যখন বন্দী, আমার জীবন আপনাদের হস্তে; এ অবস্থায় আমার নিজের কি ক্ষমতা আছে যে, তারা আমি আমার মহত্ব রক্ষা করিব? অলীদ এখন আপনাদের আজ্ঞানুবর্ত্তী, আপনাদের দাস।”

 “যেমন শুনিয়াছিলাম, তেমনই দেখিলাম। আপনার জীবন যখন আমাদের হস্তে ন্যস্ত করিলেন, তখন আর কোনও চিন্তা নাই। ঈশ্বর আপনার সেই মহত্ত্ব, সেই মান-সম্ভ্রম, জীবন,—সকলই রক্ষা করিবেন। আপনি আমাদের সকলের পূজনীয়।”

 “আমিও ভ্রাতৃভাবে পরাভব স্বীকারে এই তরবারি রাখিলাম। জীবনে আপনাদের বিনা অনুমতিতে এ হস্তে আর অস্ত্র ধরিব না, এই রাখিলাম!”

 অলীদ গাজী রহ্‌মানের সম্মুখে অস্ত্র রাখিয়া দিলেন, গাজী রহ্‌মান বিশেষ আগ্রহে ওত্‌বে অলীদকে আলিঙ্গন করিলেন এবং সমাদরে উপযুক্ত স্থানে বসাইয়া পুনরায় জিজ্ঞাসা করিলেন, “আপনার সঙ্গীদ্বয়ের পরিচয় কি?”

 “দুই জনের মধ্যে একজন আমার সঙ্গী, অপর একজনকে আমি চিনি না। যিনি আমার সঙ্গী, তাঁহার পরিচয় তিনিই দিবেন। যদি তাঁহার কোন কথায় সন্দেহ হয়, আমাকে জিজ্ঞাসা করিলে, আমি যাহা জানি অবশ্যই বলিব।”

 গাজী রহ্‌মানের ইঙ্গিতে দ্বিতীয় বন্দী (মারওয়ান) প্রহরী-বেষ্টিত হইয়া সভামণ্ডপে উপস্থিত হইল। সভাস্থ সকলের চক্ষু দ্বিতীয় বন্দীর প্রতি, বন্দীর চক্ষুও সকলের প্রতি। বন্দী চতুর্দ্দিকে চাহিয়া দেখিল,—শাস্তভাব; রোষ, ঘৃণা, অবজ্ঞার চিহ্নের নাম মাত্র সভায় নাই। পদমর্য্যাদার গৌরব, ক্ষমতার নূন্যাধিক্য, পরিচ্ছদের জাঁকজমক, উপবেশনের ভেদাভেদ কিছুমাত্র সভায় নাই। সকলেই এক, সকলেই সমান, সকলেই ভ্রাতা। ভ্রাতৃর মূলমন্ত্রে ইঁহারাই যেন যথার্থ দীক্ষিত। আরও দেখিল: সভাস্থ প্রায়ই