হোসেনের কথা তাঁহার মনে পড়িল। জয়নাল নাম তাঁহার হৃদয়ে জ্বলন্তভাবে জাগিতে লাগিল।
গাজী রহ্মান বিশেষ ভদ্রতার সহিত বলিলেন, “আপনার পরিচয় দিয়া আমাদের মনের ভ্রান্তি দূর করুন।”
জয়নাল আবেদীন সভাস্থ সকলকে অভিবাদন করিয়া বিনয় বচনে বলিতে লাগিলেন, “আমার পরিচয়ের জন্য আপনারা ব্যস্ত হইবেন না। আমার প্রার্থনা এই যে, আর দুইজন যাঁহারা আমার সঙ্গে ধৃত হইয়াছেন, তাঁহাদিগকে এই স্থানে আসিতে অনুমতি করুন।”
গাজী রহ্মান একটু চিন্তা করিয়া বলিলেন, “বন্দীদ্বয় এই সভামধ্যেই আছেন। তাঁহাদিগের দ্বারা আপনার কি প্রয়োজন, তাহা স্পষ্টভাবে বলিতে হইবে।”
“আমার প্রয়োজন অনেক। তবে গত রাত্রে আমার সহিত যখন তাঁহাদের দেখা হয়, তখন একজনকে আমি বিশেষরূপে চিনিয়াছি। কিন্তু রাত্রের দেখা, তাই কিছু সন্দেহ আছে।”
“তবে আপনি তাহাদের সঙ্গী নহেন?”
“আমি কাহারও সঙ্গী নহি—নিরাশ্রয়।” গাজী রহ্মান অঙ্গুলি দ্বারা নির্দ্দেশ করিয়া বলিলেন, “দেখুন, ঐ এক বন্দী।”
জয়নাল আবেদীন ওত্বে অলীদকে কার্বালার প্রান্তরে দেখিয়াছিলেন মাত্র, তাঁহাকে বিশেষরূপে চিনিতে না পারিয়া বলিলেন, “আমি ইহাকে ভালরূপ চিনিতে পারিলাম না। আমি যে পাপাত্মা জাহান্নামীর কথা বলিয়াছি, নিশীথ সময় সেই প্রস্তর-খণ্ডের নিকট যাহাকে দেখিয়াছি, চাকুরী করিতে সে মদিনা হইতে দামেস্কে আসিতেছে, তাহাও শুনিয়াছি—তাহাকেই আমার বেশী প্রয়োজন।”
গাজী রহ্মানের আদেশে প্রহরীগণ বন্ধন-অবস্থায় মারওয়ানকে সকলের সম্মুখে উপস্থিত করিল।
জয়নাল আবেদীন বলিলেন, “রে পামর! তোকে গত নিশীথেই চিনিয়াছিলাম। চিনিয়া কি করিব, আমি নিরস্ত্র।”