পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
২৮

নিয়োজিত কার্য্যে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করিয়া তাহাতেই পরিতৃপ্ত থাকা সর্ব্বতোভাবে কর্ত্তব্য। জীবন কয় দিনের? জীবনের আশা কি? এই চক্ষু মুদ্রিত হইলেই সকল আশা-ভরসা ফুরাইয়া যাইবে। তবে কয়েক দিনের জন্য দুরাশার বশবর্ত্তী হইয়া অমুলক উচ্চ আশায় লালায়িত হওয়ায় ফল কি? ধন-সম্পত্তি, রাজ্য বা রূপের আমি প্রত্যাশী নহি। বড় মানুষের মন বড়, আশাও বড়। তাহাদের সকল কার্য্যই আড়ম্বরবিশিষ্ট, অথচ কিছুই নহে। বিশ্বাসের ভাগ অতি অল্প। স্থূল কথা—বিষয়বিভব, রাজপ্রাসাদ ও রাজভোগের লোভী আমি নহি। সে লোভ এ জীবনে কখনই হইবে না। মনের কথা আজ অকপটে আপনার নিকট বলিলাম।

 মোস্‌লেম কহিলেন, “ইহাতে ত আপনার মনোগত ভাব স্পষ্ট বুঝিতে পারিলাম না”

 “ইহা অপেক্ষা স্পষ্ট কি আর হইতে পারে? যিনি ঐহিক পারত্রিক উভয় রাজ্যের রাজা, তিনি যখন আমাকে দাসীশ্রেণীর মধ্যে গ্রহণ করিতে ইচ্ছা করিয়াছেন, তখন আমার ন্যায় সৌভাগ্যবতী রমণী অতি কমই দেখিতে পাইবেন। আর ইহা কে না জানে যে, যাঁহার মতামহের নিমিত্তই জগতের সৃষ্টি; আদিপুরুষ হজরত আদম জ্ঞান প্রাপ্ত হইয়াই ঈশ্বরের নিকট কৃজ্ঞতাসূচক সাষ্টাঙ্গে প্রণিপাত করিবার পর মস্তক উত্তোলন করিয়া সেই দয়াময়ের আসনের শিরোভাগে যাঁহার নাম প্রথমেই দেখিয়াছিলেন, তিনি সেই প্রভু হজরত মোহাম্মদের দৌহিত্র। তিনি যখন জয়নাবকে চাহিয়াছেন, তখন জয়নাবের স্বর্গসুখ ইহকালেই সমাগত। পাপীর পাপের প্রায়শ্চিত্ত কোথায় না আছে? কিন্তু সাধুপুরুষের পদাশ্রিত হইতে পারিলে পরকালের মুক্তি পথের পাপকণ্টক বিদূরিত হইয় স্বর্গের দ্বার পরিষ্কার থাকিবে। তাঁহারা যাহার প্রতি একবার সস্নেহ নয়নে দৃষ্টিপাত করিবেন, সেই ব্যক্তি নরকাগ্নি হইতে মুক্ত হইয়া প্রধান স্বর্গ জান্নাতে নীত হইবে। আর অধিক কি বলিব, আমার বৈধব্যব্রত পূর্ণ হইলেই প্রভু হাসান যে সময়ে আমাকে দাসীত্বে গ্রহণ করিবেন, আমি মনের আনন্দে সেই সময়েই সেই পবিত্র চরণে আত্মসমর্পণ করিব। অন্য কোন প্রার্থীর কথা আর মুখে আনিব না।”