পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪২৯
উদ্ধার পর্ব্ব—ত্রিংশ প্রবাহ

করিতে সসৈন্যে মদিনায় আসিয়াছিল। যুদ্ধে পরাস্ত হইয়া এই পামরই মায়মুনার সহযোগে জাএদার সাহায্যে হীরকচূর্ণ দ্বারা মহাত্মা হাসানের জীবন অকালে বিনাশ করিয়াছে। এই দুরাচারই কুফা নগরে আবদুল্লাহ্ জেয়াদকে টাকায় বশীভূত করিয়া মহাবীর মোস্‌লেমের জীবন মিথ্যা ছলনায় কৌশলে শেষ করিয়াছে। এই নারকীই কার্‌বালা প্রান্তরে মহা সংগ্রাম ঘটাইয়াছে; কৌশলে ফোরাত-কূল বন্ধ করিয়া শত সহস্র যোদ্ধাকে শুষ্ককণ্ঠ করিয়া বিনাশ করিয়াছে। কি দুঃখের কথা! তীক্ষ্ণ তীর দ্বারা দুগ্ধপোষ্য বালকেরও বক্ষ ভেদ করাইয়া সে জগৎ কাঁদাইয়াছে।—অন্যায় যুদ্ধে মহাবীর আবদুল ওহাবকে বধ করিয়াছে। কত বলিব, এই পাপাত্মাই সর্ব্বশ্রেষ্ঠ বীর—”

 জয়নালের চক্ষু জলে পরিপূর্ণ হইল। পুনরায় করুণস্বরে তিনি বলিলেন, “আরবের সর্ব্বশ্রেষ্ঠ বীর কাসেমের জীবন-লীলা এই দুরাত্মাই শেষ করিয়াছে। এই পাপাত্মাই পতিপরায়ণা সখিনার আত্মহত্যার কারণ। আর কত বলিব! এই জাহান্নামী কাফের মারওয়ানই পুণ্যাত্মা, পিতা প্রভু হোসেনের জীবন—”

 জয়নালের মুখে আর কথা সরিল না,—চক্ষুদ্বয় জলে ভাসিতে লাগিল। মোহাম্মদ হানিফা হৃদয়-বেগ সম্বরণে অধীর হইয়া—“হা ভ্রাতঃ হাসান! হা ভ্রাতঃ হোসেন! বাবা জয়নাল! হানিফার অন্তরাত্মা শীতল কর্ বাপ।” এই কথা বলিয়া কাঁদিতে কাঁদিতে জয়নালকে বক্ষে ধারণ করিলেন। তাঁহার শোকাবেগ ক্রমেই বৃদ্ধি হইতে লাগিল।

 সভাস্থ আর আর সকলে ক্রোধে, রোষে, দুঃখে, শোকে এক প্রকার জ্ঞানহারা উন্মাদের ন্যায় সমস্বরে বলিয়া উঠিলেন, “এ কি সেই মারওয়ান? এ কি সেই মারওয়ান? মার শয়তানকে। ভাই সকল, আর দেখ কি?”

 গাজী রহ্‌মান বহুবিধ চেষ্টা করিয়াও সভাস্থ সকলের সেই উগ্রবৃত্তি, সেই বিকট ভাব পরিবর্ত্তন করিতে পারিলেন না, কেহই তাঁহার কথা শুনিল না; শেষে মোহাম্মদ হানিফার কথা পর্য্যন্তও কেহ গ্রাহ্য করিল না। “মার শয়তানকে!” বলিতে বলিতে পাদুকাঘাত, মুষ্ট্যাঘাত, অস্ত্রাঘাত, যত প্রকায় আঘাত প্রচলিত আছে, বজ্রাঘাতের ন্যায় মারওয়ানের শরীরে