পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৩৩
উদ্ধার পর্ব্ব—ত্রিংশ প্রবাহ

গুণানুবাদ করিতে করিতে জয়নাল আবেদীনের জয়-ঘোষণা করিলেন। ভিন্ন ভিন্ন দেশীয় প্রাচীন রাজগণ নতশিরে অভিবাদন করিয়া উপঢৌকনাদি জয়নালের সম্মুখে রাখিয়া অন্তরের সহিত আশীর্ব্বাদ করিলেন। মদিনা এবং নানা দেশ-বিদেশের সৈন্যগণ অবনত মস্তকে নবীন রাজার সম্মুখে অস্ত্রাদি রাখিয়া সমস্বরে মদিনা-সিংহাসনের জয়ঘোষণা করিলেন।

 মোহাম্মদ হানিফা পুনরায় বলিলেন, “ভ্রাতৃগণ। এখন সকলেই স্ব স্ব অস্ত্র পুনর্দ্ধারণ করিয়া প্রথমে ঈশ্বরের নাম, তার পর নূরনবী মোহাম্মদের নাম এবং সর্ব্বশেষে নবীন ভূপতির জয়-ঘোষণা করিয়া বীরদর্পে দণ্ডায়মান হও।”

 হানিফার কথা শেষ না হইতেই গগনভেদী শব্দ হইল। ঈশ্বরের নামের পর, নূরনবী মোহাম্মদের প্রশংসার পর, “জয় মদিনার সিংহাসনের জয়—জয় নবীন ভূপতির জয়,— জয়নাল আবেদীন মহারাজের জয়” এই শব্দ হইতে লাগিল।

 আবার মোহাম্মদ হানিফা বীরদর্পে বীরভাবে বলিতে লাগিলেন, “ভ্রাতৃগণ। এই অসি ধারণ করিলাম, বীরবেশে সজ্জিত হইলাম,—এজিদ-বধ না করিয়া আর ফিরিব না—তরবারি কোষে আবদ্ধ করিব না; যতদিন এজিদ বধ ও পরিজনগণের উদ্ধার না হয়, ততদিন এই বেশ—এই বীর-বেশ অঙ্গে থাকিবে। আমিও আজ তোমাদের সঙ্গী, আমিও আজ সৈন্য, আমিও আজ জয়নালের আজ্ঞাবহ। সকলেরই আজ এই প্রতিজ্ঞা—এই যাত্রাতেই হয় এজিদ-বধ, না হয় আমাদের জীবনের শেষ। দিবা হউক, নিশা আগমন করুক, আর সূর্য্যের উদয় হউক,—এজিদ-বধ! এজিদ-বধ না হওয়া পর্য্যন্ত আমাদের এই বেশ—এই বীর-বেশ। আমরা বিশ্রামের নাম করিব না, যুদ্ধে ক্ষান্ত দিব না, পশ্চাৎ হটিব না—জীবন পণ—হানিফার জীবন পণ—এজিদ-বধ! সকলেরই এজিদ-বধে জীবন পণ। আজিকার যুদ্ধে বিচার নাই, ব্যূহ নাই, কোন প্রকার বিধি-ব্যবস্থাও নাই: মার কাফের, জ্বালাও শিবির!—কাহারও অপেক্ষা কেহ করিবে না, কাহারও উপদেশ প্রতি কেহ লক্ষ্য রাখিবে না। আজ সকলেই সেনাপতি—সকলেই সৈন্য। সকলের মনে যেন এই কথা মুহুর্ত্তে