পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৩৯
উদ্ধার পর্ব্ব—ত্রিংশ প্রবাহ

 এজিদ দুঃখিতভাবে বলিতে লাগিলেন, “অলীদ! এতদিন এত যত্ন করিলাম, পদবৃদ্ধি করিলাম, কত পারিতোষিক দান করিলাম, কত অর্থ সাহায্য করিলাম; তাহার প্রতিফল—তাহার পরিণাম-ফল বুঝি ইহাই হইল?”

 “আমি নিমকহারামী করি নাই, কোন লোভের বশীভূত হইয়া আপনার শত্রুদলে মিশি নাই। শত্রু-শিবিরে যাইতেছিলাম—দৈব নির্ব্বন্ধে ধরা পড়িলাম। কি করি, পরাভব স্বীকার করিয়া সত্যধর্ম্ম গ্রহণ করিয়াছি। পরকালের মুক্তির পথ পরিষ্কার করিতেই আজ কাফের-বধে অগ্রসর হইয়াছি —অস্ত্র ধরিয়াছি।”

 এজিদ রোষে অধীর হইয়া বলিলেন, “ওমর! এখনও অলীদ-শির মৃত্তিকায় লুণ্ঠিত হয় নাই, ইহাই,আশ্চর্য্য!"

 এজিদ ওমরকে সজোরে পশ্চাতে রাখিয়া অলীদের প্রতি আঘাত করিলেন। কি দৃশ্য! কি চমৎকার দৃশ্য!!

 অলীদ সে আঘাত বর্ম্মে উড়াইয়া বলিলেন, “আমি আপনার প্রতি অস্ত্র নিক্ষেপ করিব না। বিশেষত, মহাবীর মোহাম্মদ হানিফা, যিনি আজ স্বয়ং যুদ্ধভার গ্রহণ করিয়া সর্ব্বপ্রধান সেনাপতি-পদে বরিত হইয়াছেন, তাঁহার নিষেধ আছে।”

 এজিদ বলিলেন, “ওরে মূর্খ! এক রাত্রি মূর্খদলের সহবাসে থাকিয়াই তোর দিব্যজ্ঞান জন্মিয়াছে! স্বয়ং রাজা সেনাপতি। তবে বরিত হইল কে? রাজমুকুট শোভা পাইল কাহার শিরে? রাজা স্বয়ং যুদ্ধে আসিলে ক্ষতি কি?—সেনাপতির উপাধি লইয়া স্বয়ং রাজা যুদ্ধক্ষেত্রে আসিয়া থাকে রে বর্ব্বর?”

 “এজিদ-নামদার! আমি বর্ব্বর নহি। রাজা সেনাপতির পদ গ্রহণ করেন না, তাহা আমি বিশেষরূপে জানি। মোহাম্মদ হানিফা তাঁহার রাজ্যের রাজা, মদিনার তিনি কে?”

 “মদিনায় আবার কোন রাজার আবির্ভাব হইল?”

 “মহাশয়, যিনি মদিনার রাজা,— তিনিই দামেস্কের রাজা—তিনিই