পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৪৭
এজিদ বধ পর্ব্ব—প্রথম প্রবাহ

ছড়াইয়া পড়িয়াছে; জিহ্বা মুখ হইতে বাহির হইয়া নাসিকা ঢাকিয়া চক্ষুর উপরে হেলিয়া পড়িয়াছে; চক্ষু উল্টাইয়া ফাটিয়া রক্ত পড়িবার উপক্রম হইতেছে; ইহাতেও নিস্তার নাই, সময়ে সময়ে দোর্‌রার আঘাতে শরীরের চর্ম্ম ফাটিতেছে! রক্ত পড়িতেছে! কি মর্ম্মঘাতী অন্তরভেদী ভীষণ ব্যাপার। আর দেখা যায় না। চলুন, অন্য দিকে যাই।

 ঐ যে বৃদ্ধ বন্দী—লৌহশৃঙ্খলে আবদ্ধ, নিবিষ্টচিত্তে ধ্যানে মগ্ন, হাব-ভাব দেখিয়া যেন ইহাকে চেনা-চেনা বোধ হইতেছে। কোথায় যেন দেখিয়াছি, মনে পড়ে! অনুমান মিথ্যা নহে। এই সেই মহাত্মা মন্ত্রিপ্রবর হামান, হজরত মাবিয়ার প্রধান মন্ত্রী, এজিদের পুণ্যাত্মা পিতার প্রিয় সচিব! মহাজ্ঞানী বৃদ্ধ হামান, এজিদ-আজ্ঞায় বন্দী—লৌহ-শৃঙ্খলে আবদ্ধ। বৃদ্ধবয়সে এই যন্ত্রণা! মন্ত্রী-প্রধান হামান কি যথার্থ বিচারে বন্দী? মহারাজ এজিদ কি অপরাধে ইঁহাকে কারাগারে নিক্ষেপ করিয়াছেন, তাহা কি মনে হয়। হানিফার সহিত যুদ্ধে তাঁহার অমত, দামেস্কাধিপতির স্বয়ং যুদ্ধক্ষেত্রে গমনে তাঁহার অমত প্রকাশ, এজিদের মতের সহিত তাঁহার মতের অনৈক্য—সুতরাং তিনি এজিদ-আজ্ঞায় বন্দী! দামেস্ক নগরের ভূতপূর্ব্ব দণ্ডধর হজরত মাবিয়ার দক্ষিণ-হস্তই ছিলেন—এই হামান। এজিদের হস্তে পড়িয়া মহাঋষির এই দুর্দ্দশা! হায় রে জগৎ! হায় রে স্বার্থ! দামেস্ক-সিংহাসনের চির গৌরব-সূর্য্য এজিদ-কল্যাণে আজ অস্তমিত!

 পিতার,—মাননীয় পিতার ভালবাসার পাত্রকে কোন্ পুত্র অবজ্ঞা করিয়া থাকে? হামানের চিন্তা ভ্রম-সঙ্কুল ছিল না,—আশা ও দুরাশার পথে অযথা দণ্ডায়মান হইয়া কুহকে মাতিয়াছিল না—কারণ, এ আশা মানুষেরই হয়: মানুষের দৃষ্টান্তেই মানুষ শিক্ষা পায়। আশা ছিল, —মন্ত্রি প্রবরের মনে আশা ছিল,—এজিদ মাবিয়ার সন্তান; পিতৃ-অনুগৃহীত বলিয়া অবশ্যই সে তাঁহাকে দয়া করিবে; বৃদ্ধ বয়সে নবীন রাজপ্রসাদে সুখী হইয়া নিশ্চিন্তভাবে ঈশ্বর আরাধনায় তাঁহার জীবনের অবশিষ্ট অংশ কাটিয়া যাইবে। নিয়তির বিধানে তাহা ঘটিল না। অথচ এজিদের স্বেচ্ছাচার-