পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৫১
এজিদ বধ পর্ব্ব—প্রথম প্রবাহ

দেখিতে হইবে, লাভালাভের প্রতিও লক্ষ্য রাখিতে হইবে, আপন আপন ক্ষমতার পরিমাণও বুঝিতে হইবে, ধনাগারের অবস্থাও ভাবিতে হইবে। আত্মীয়, স্বজন, বন্ধুবান্ধব, পুরবাসী, প্রতিবেশী, সমকক্ষ, সমশ্রেণী, জাতি, কুটুম্ব এবং রাজ্যের গণ্যমান্য ধনী ও সাধারণ প্রজার মনের ভাব বিশেষ করিয়া অতি গোপনে কৌশলে পরীক্ষা করিতে হইবে। কেবল ধনভাণ্ডার খুলিয়া দিয়াই চক্ষু শীতল করিলেই চলিবে না। আহার্য্য-সামগ্রী—কেবল মানুষের নয়, গরু ঘোড়া ইত্যাদি পালিত জীবজন্তুসহ নগরস্থ প্রাণীমাত্রেরই কত দিনের আহার মজুত, প্রাণীর পরিমাণ, আহার্য্য সামগ্রীর পরিমাণ, আনুমানিক যুদ্ধকালের পরিমাপ করিয়া সমুদয় সাব্যস্ত-বন্দোবস্ত, আমদানী-রপ্তানি, পানীয় জলের সুবিধা পর্য্যন্ত করিয়া—তবে অন্য কথা।”

 “এ যুদ্ধে এ কথাটা অগ্রেই ভাবা উচিত ছিল: মহাবীর মোহাম্মদ হানিফা বহুদুর হইতে আক্রমণ আশায় আসিয়াছেন। দামেস্ক—ভিন্ন দেশ, তাঁহার পক্ষে সহসা এখানে প্রবেশই দুঃসাধ্য। ইহার পর নগর-আক্রমণে আশা—রাজবন্দী-গৃহ হইতে পরিজনগণকে উদ্ধারের আশা—এজিদ-বধ করিয়া দামেস্কসিংহাসন অধিকার করিবার আশা—এক একটি আশা কম পরিমাণের আশা নহে—কথাচ্ছলে আমি ইহাকে এক প্রকার দুরাশাও বলিতে পারি, কারণ, রাজ্যের সীমাই যুদ্ধের সীমা। সে সীমা অতিক্রম করিয়া নগর-প্রান্তভাগের প্রান্তরে এজিদের মহাকাল স্বয়ং আসিয়া উপস্থিত। এক গাজী রহ্‌মানের বুদ্ধি-কৌশলে সকল বিষয়ে সুন্দর বন্দোবস্ত। যাহা তাহাদের পক্ষে কঠিন ছিল, তাহাও তাহারা অনায়াসেই সুসিদ্ধ করিয়াছে। রাজ্য-সীমায় প্রবেশ দূরে থাকুক, নগরের প্রান্তসীমায় রণভূমি—আর আশা কি?”

 “অন্যায় সমরে রাজা স্বয়ং যুদ্ধক্ষেত্রে। কি পরিতাপ। যে রাজা রাজনীতির বাধ্য নহে, সমরনীতির অধীন নহে, স্বেচ্ছাচারিতাই যাহার মস্তিষ্কের বল, তাহার কি আর মঙ্গল আছে? প্রণয়ে, প্রেমে যে রাজা আসক্ত, তাহার কি আর শ্রীবৃদ্ধি আছে? যুদ্ধবিগ্রহে পিরিত—প্রণয়ের প্রসঙ্গ আসিতেই পারে না। মুল কারণ হওয়া দুরে থাকুক, সে নামেই সর্ব্বনাশ! রাজনীতি, সমরনীতি, এই দুইটি নীতির অভ্যন্তরে প্রবেশ করিয়া