পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৪৫২

যতই জ্ঞানলাভ হইবে, যতই অভিজ্ঞতা জন্মিবে, ততই বুঝিতে পারা যাইবে যে, ইহার মধ্যে কি না আছে! জগতের সমুদয় ভাব, স্বভাব, ব্যবহার ও কার্য্য-প্রণালী সমুদয়ই ঐ দুই নীতির মধ্যগত। কিন্তু ব্যবহারের ক্ষমতা, পরিচালনার বল, কার্য্যে পরিণত করিবার অধিকার সম্পূর্ণরূপে জগতে কোন প্রাণীর মস্তকে আছে কি না সন্দেহ!”

 “এ ধর্ম্মনীতির কথা নহে যে, ঘাড় নেয়াইয়া বিশ্বাস করিতেই হইবে। পাপের প্রায়শ্চিত্ত নহে যে, কালে হইবেই হইবে। এ প্রসূতির প্রসব-বিষয়ের চিন্তা নহে যে, দশ মাস দশ দিন পরে যাহা হয় একটা হইবেই হইবে, এ অদৃষ্ট-লিপির প্রতি নির্ভরের কার্য্য নহে যে, যাহা কপালে লেখা আছে, তাহাই ঘটিবে। এ রাজ-চক্র, ইহার মর্ম্মভেদ করা বড়ই কঠিন। বিশেষতঃ, সমর-কাণ্ড যেমন কুটিল, তেমনি জটিল। যখনই প্রশ্ন তখনই উত্তর, যে মুহূর্ত্তে চিন্তা, সেই মুহূর্ত্তেই কার্য্য, তখনই কার্য্যফল! দ্রুতগতি সময়ের সহিত সমরকাণ্ডের কার্য্য-সম্বন্ধ-বুদ্ধির কৌশল,—বিবেচনার ফল। জয়-পরাজয়ের সময় অতি সংক্ষেপ। একদিকে দক্ষিণ চক্ষু দেখিল: বীরবরের হস্তস্থিত তরবারি বিদ্যুত-লতায় চমকাইতেছে-অন্যদিকে বাম চক্ষু দেখিল: ঐ মহাবীরের রঞ্জিত দেহ ভূতলে গড়াইতেছে, রঞ্জিতহস্তে রঞ্জিত তরবারি বদ্ধমুষ্টিতে ধরাই রহিয়াছে। বর্ত্তমান যুদ্ধে যে কি ঘটিবে, তাহা ভগবানই জানেন। আমার সময় মন্দ। কাহারও নিকট কিছু জিজ্ঞাসা করিতে সাহস হয় না, কাহারও মুখে কিছু শুনিতে পাই না। মহারাজ আজ্ঞা করিয়াছেন—বন্দী হইয়াছি। লৌহশৃঙ্খল গলায় পরিতে হুকুম দিয়াছেন, হুকুম তামিল করিয়াছি। ইহাতে দুঃখমাত্র নাই, অন্তরেও বেদনা বোধ করি নাই। তবে বেদনা লাগিয়াছে যে, এই সঙ্কট সময়ে অকারণ যুদ্ধে অগ্রসর—স্বয়ং রাজার অগ্রসর,— স্বয়ং রাজার অস্ত্রধারণ। বড়ই দুঃখের কথা। এ যুদ্ধের পরিণাম ফল কি হইবে? কে হারিবে, কে জিতিবে। সন্ধি—অসম্ভব। যুদ্ধ অনিবার্য্যরূপে চলিতেছে, সমরগগনে লোহিত নিশান বায়ুর সহিত এখনও খেলা করিতেছে,—ইহাতে সন্দেহমাত্র নাই। আমার ত এই বিশ্বাস যে, দামেস্ক-প্রান্তরই রঞ্জিত হইতেছে। দামেস্ক-ভূমি দামেস্ক-বীর-শিরেই পরিপূর্ণ হইতেছে। এ অবৈধ