পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩১
মহরম পর্ব্ব—ষষ্ঠ প্রবাহ

বার জিজ্ঞাসা করিয়া তাহার আদি-অন্ত তন্ন তন্ন রূপে শুনিবেন! প্রথম মিলনের নিশিতে জয়নাবকে কি বলিয়া সম্বোধন করিবেন, আজ পর্য্যন্তও তাহার মীমাংসা করিয়া উঠিতে পারেন নাই। সালেহার বিবাহের আদি অন্ত ঘটনা এবং তাঁহার ভগ্নী কেহই নাই, অথচ সালেহা নাম—এই ষড়যন্ত্র যে কেবল জয়নাব-লাভের জন্য হইয়াছিল, তাহা তিনি অকপটে বলিবেন কি-না, আজ পর্য্যন্তও স্থির করিতে পারেন নাই। এই সকল অমূলক চিন্তায় এবং মােস্‌লেমের প্রত্যাগমনের বিলম্বে পূর্ব্ব হইতে তিনি আরও অস্থিরচিত্ত হইয়াছিলেন। আজ খাদ্যসামগ্রী যথাস্থানেই পড়িয়া রহিয়াছে, সেবকগণ প্রভুর আহারের প্রতীক্ষায় কিঞ্চিৎ দূরে বসিয়া কত কি বলিতেছে, মৃদুমৃদুভাবে নানা প্রকার অকথাকথনে এজিদের নিন্দা করিতেছে—“ঈশ্বর দাসত্বশৃঙ্খলে আবদ্ধ করিয়াছে, কি করিব, উপায় নাই!”—এই বলিয়া নিজ নিজ অদৃষ্টকে ধিক্কার দিতেছে। রজনী দ্বিপ্রহর গত হইল, তথাপি এজিদের চিন্তার শেষ হইল না; কখনও উঠিতেছেন, গৃহমধ্যে দুই চারিবার পদচালনা করিয়া আবার বসিতেছেন, ক্ষণকাল ঐ উপবেশন-শয্যাতেই শয়ন করিয়া এপাশ-ওপাশ করিতেছেন। ক্ষুধা তৃষ্ণা থাকিলে অবশ্যই তিনি আহারের প্রতি মনােযােগ দিতেন। সমস্তই ভুল! কিছুতেই তিনি মন স্থির করিতে পারিতেছেন না।

 সকল সময়েই সকল স্থানেই এজিদের নিকট মারওয়ানের যাইবার অনুমতি ছিল। মারওয়ান আসিয়াই অভিবাদন করিয়া সম্মুখে উপবেশন করিলেন। এজিদের চিত্তচাঞ্চল্য দেখিয়া চিন্তিতভাবে বলিলেন, “যখন কোন পথ ছিল না, তখনই চিন্তিত হইবার কথা, এখন ত হস্তগত হইবারই অধিক সম্ভাবনা; এখন আর চিন্তা কি? বলুন ত, জগতে সুখী হইতে কে না ইচ্ছা করে? আবার সে সুখ সামান্য নয়, একেবারে সীমার বহির্ভূত। অবস্থার একটু উচ্চ পরিবর্ত্তন হইলেই লােকে মহাসুখী হয়; এ ত একটু পরিমাণ নয়, একেবারে পাটরাণী! বিশেষ, স্ত্রীজাতি বাহ্যিক সুখপ্রিয়। আপনি কোন প্রকার সন্দেহ মনে স্থান দিবেন না; নিশ্চয় জানিবেন, জয়নাব কখনই অসম্মত হইবে না। আমি স্পষ্টাক্ষরে লিখিয়া দিতে পারি যে, জয়নাব আপনারই হইবে এবং আপনারই অঙ্ক শোভা করিবে।”