পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৪৬০

অন্তরভেদী আর্ত্তনাদ! আবার মধ্যে মধ্যে আনন্দধ্বনি, বিজয়ের উচ্চরব। আবার মাঝে মাঝে কান্নার রোল, আর্ত্তনাদ, কোলাহল, হৃদয়বিদারক “ম’লাম —গেলাম—প্রাণ যায়!” শব্দ,—বিষাদের কণ্ঠ! উঁহু! এ কি ব্যাপার। ভীষণ কাণ্ড! পিতার সম্মুখে পুত্রের বধ। মাতার বক্ষের উপর কন্যার শিরশ্ছেদ। পত্নীর সম্মুখে পতির দেহে বর্শা প্রবেশ। পুত্রের সম্মুখে বৃদ্ধ মাতার মস্তক চূর্ণ! সুদীর্ঘ কৃষ্ণকেশযুক্ত রমণী-শির,—কৃষ্ণ, শুভ্র, লোহিত ত্রিবিধ রঙ্গের আভা দেখাইয়া পিতার সম্মুখে—ভ্রাতার সম্মুখে—স্বামীর সম্মুখে দেখিতে দেখিতে গড়াইয়া পড়িতেছে —কলিজা পার হইয়া রক্তের ফোয়ারা ছুটিয়াছে। কি ভয়ানক ভীষণ ব্যাপার! কত নরনারী ধর্ম্ম-রক্ষায় নিরাশ হইয়া পাতালস্পর্শী কূপে আত্ম-বিসর্জ্জন করিতেছে। কেহ অন্য উপায়ে—যে প্রকারে যে সুবিধা পাইতেছে, সেই উপায়েই অত্যাচায়ের ভয়ে আত্মঘাতিনী হইয়া পাপীর মস্তকে পাপভার অধিকতররূপে চাপাইতেছে। মারবার সময় তাহারা বলিয়া যাইতেছে,—“রাজার দোষে রাজ্যনাশ, প্রজার বিনাশ।—ফল হাতে হাতে। প্রতিকার কাহার না আছে? রে এজিদ। রে জয়নাব।”

 সৈন্যদল নগরের যে পথে যাইতেছে, সেই পথেই এইরূপ জ্বলন্ত আগুন জ্বালাইয়া পাষাণ-হৃদয়ের পরিচয় দিয়া যাইতেছে। দয়ার ভাগ যেন জগৎ হইতে একেবারে উঠিয়া গিয়াছে! মায়া-মমতা যেন দুনিয়া হইতে জন্মের মত সরিয়া পড়িয়াছে।

 কিন্তু এত করিয়াও হানিফার সৈন্যদিগের হিংসার নিবৃত্তি হইতেছে না। এত অত্যাচার, এত রক্তধারায়ও সে বিষম তৃষ্ণা নিবারণ হইতেছে না। এত করিয়াও শত্রুবধ-আকাঙ্খা মিটিতেছে না! মদিনার বীরগণ করুণস্বরে বলিতেছে-“আম্বাজী সৈন্যগণ! গঞ্জামের ভ্রাতাগণ! তোমরা মনে মনে ভাবিতেছ যে, আমরা সময় পাইয়া শত্রুর প্রতি অন্যায় অত্যাচার করিতেছি। ভাইসকল! ভাবিয়া দেখিলে —একটু চিন্তা করিয়া দেখিলে দেখিবে তাহা সত্য নহে। এজিদ মদিনাবাসীদিগের প্রতি যেরূপ অত্যাচার, যেরূপ ব্যবহার করিয়াছে, তাহার প্রতিশোধ লওয়া এখনও হয় নাই। অস্ত্রের