পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৪৬২

হইল। সঙ্কেত-চিহ্নে সমুদয় সৈন্য দামেস্ক-রাজপথে যে যে পদে, যে যে ভাবে দাঁড়াইয়াছিল, সেই সেই পদে, সেই সেই স্থানেই দাঁড়াইয়া রহিল। কি সংবাদ? ব্যস্ত হইয়া সকলেই জয়নাল আবেদীনের চন্দ্রাতপোপরিস্থ পতাকার প্রতি দৃষ্টিনিক্ষেপ করিলেন। তাঁহারা কোনরূপ বিরূপ বা বিপর্য্যয় ভাব দেখিলেন না। জাতীয় নিশান হেলিয়া দুলিয়া গৌরবের সহিত শূন্যে উড়িতেছে। বিজয়বাজনা সমভাবে বাজিতেছে। গাজী রহ্‌মান অশ্বপৃষ্ঠে থাকিয়াই মস্‌হাব কাক্কা, ওমর আলী এবং আক্কেল আলির সহিত কথা কহিতেছেন। অশ্বসকল গ্রীবাবক্রে স্থিরভাবে দণ্ডায়মান, কিন্তু সময়ে সময়ে পুচ্ছগুচ্ছ হেলাইয়া ঘুরাইয়া কর্ণদ্বয় খাড়া করিয়া স্বাভাবিক চঞ্চলতা ও তেজোভাবের পরিচয় দিতেছে।

 গাজী রহ্‌মান বলিলেন: “রাজপুরী নিকটবর্ত্তী, বাদশাহ্-নামদারের কোন সংবাদই পাইতেছি না।”

 মস্‌হাব কাক্কা বলিলেন: “গুপ্তচর-সন্ধানীগণ যুদ্ধক্ষেত্রেই আছে। এ পর্য্যন্ত সংবাদ নাই, —এ কি কথা! কারণ কি?”

 গাজী রহ্‌মান বলিলেন: “যুদ্ধাবসানে, কি বিজয়ের শেষ মুহূর্ত্তে আপন আপন সৈন্যসামন্ত, ভারবাহী, সংবাদবাহী প্রধান প্রধান যোদ্ধা এবং সেনানায়কগণের প্রতি বিশেষ মনোযোগ রাখিতে হয়। বিজয়-আনন্দে কে কোথায় কাহার পশ্চাতে মার্ মার্’ শব্দে মাতোয়ারা হইয়া ছুটিতে থাকে, কিছুই জ্ঞান থাকে না; সে সময়ে বড়ই সতর্ক ও সাবধান হইয়া চলিতে হয়। আপন দলবল ছাড়িয়া কে কাহার পশ্চাৎ কতদূর তাড়াইয়া লইয়া যায়, সে জ্ঞান প্রায় কাহারও থাকে না। এই অবস্থায় যুদ্ধজয়ের পরেও অনেক যুদ্ধজয়ী সামান্য লোকের হস্তে প্রাণ হারাইয়াছেন, ইহারও বহুতর দৃষ্টান্ত আছে। পলায়িত শক্তগণ ছিন্নবিচ্ছিন্ন হইয়া কে কোথায় লুকাইয়া থাকে, কে বলিতে পারে? এজিদের সৈন্য বলিতে একটি প্রাণী ও আর যুদ্ধক্ষেত্রে নাই। তবে মোহাম্মদ হানিফা কোথা রহিলেন? এজিদের কোন সংবাদও পাওয়া যায় নাই। বিপক্ষ দলেও কোন সংবাদ এ পর্য্যন্ত পাওয়া যায় নাই। তবে ইহা নিশ্চয় যে, বিপক্ষ দলের সংবাদ—শূন্য। মোহাম্মদ হানিফা কোথায়, আমার